আল্লাহর পরিচয়, সংক্ষেপে আল্লাহর পরিচয় দাও, আমরা কিভাবে আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারি?
এ বিশ্ব জগত যিনি সৃষ্টি করেছেন, যাঁর নিয়ন্ত্রণে সৃষ্ট জীবের জন্ম-মৃত্যু তিনিই মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন। মহান আল্লাহ্ এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার বা শরীক নেই, তিনিই সর্বময় ক্ষমতা ও জ্ঞানের অধিকারী। তাঁর অশেষ রহমত ও করুণার মাধ্যমেই পৃথিবীর সবকিছু নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং মহান আল্লাহ্পাক সম্পর্কে মুসলমান মাত্রই সম্যক ধারণা অর্জন করা বিশেষ প্রয়োজন। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হল।
অনাদিকাল থেকেই মহান আল্লাহ্ স্বীয় অস্তিত্ব এবং মহিমার সাথে বিরাজ করছিলেন, করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। সৃষ্টিকূলের উন্নতি-অবনতি, জীবন-মৃত্যু ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াবলী মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়ে থাকে। এ জগতে আল্লাহর কর্তৃত্ব এবং মালিকানা ছাড়া অন্য কারও কোন অধিকার নেই।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে ঘোষণা হয়েছে- "তিনিই আল্লাহ্ যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ্ বা উপাস্য নেই। তিনি (আল্লাহ্) চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী যাঁকে তন্দ্রা এবং নিদ্রা স্পর্শও করতে পারে না। আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে এসব কিছুর একমাত্র মালিক তিনি (আল্লাহ্)।"
আমাদের মাথার উপর যে সুবিশাল আকাশসমূহ বিস্তৃত রয়েছে অথচ এসবের মধ্যে কোন খুঁটি নেই। একমাত্র আল্লাহর আদেশেই এগুলো প্রতিষ্ঠিত আছে। এ ব্যাপারে মহা পবিত্র কোরআন পাকে ঘোষণা হচ্ছে-"তিনিই আল্লাহ্ যিনি আকাশসমূহকে খুটিহীনভাবে শামীয়ানার মত ঝুলিয়ে রেখেছেন, যা তোমরা দেখছ।"
মানুষকে কয়েকটি উপাদানের সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। যথা: আগুন, পানি, বাতাস ও মাটি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হচ্ছে- "আল্লাহ্ তিনিই যিনি তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মাটির উপরই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তোমাদেরকে বিচরণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।"
এছাড়াও পৃথিবীর আনাচে-কানাচে, মাঠে-ঘাটে তথা যেদিকেই চোখ যায় সে দিকেই মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলী বিরাজমান রয়েছে। এবিষয়ে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন- "বিশ্বের সর্বত্র আমার নিদর্শনাবলী প্রকাশিত হচ্ছে এবং মানুষের নিজের মধ্যেও। তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ না?"
প্রখ্যাত মুফাস্সির হযরত ইমাম রাযী (রহঃ) মহান আল্লাহ্ পাকের একত্ববাদের উপর প্রামাণ্য দলিল স্বরূপ এক হাজারেরও অধিক প্রমাণ (যুক্তি) তুলে ধরেছেন। ঘটনাক্রমে তিনি এক আরব বেদুঈন মুসলমানকে কথা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব এবং একত্ববাদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
আরব বেদুঈন লোকটি বিস্ময়ভরা কন্ঠে উত্তর দিলেন যে, মরুভূমিতে বালির ওপর পায়ের চিহ্ন দেখে যদি পথিকের পরিচয় পাওয়া যায়। দূর হতে ধোঁয়া দেখে যদি আগুনের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে' বাধ্য করে।
তাহলে এ বিশাল আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, নদী-নালা, তরঙ্গ ইত্যাদি ফুলে-ফলে ভরা বাগান, বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি মিশ্রিত সুশোভিত পৃথিবীর এত সবকিছু দেখেও কি প্রমাণিত হয় না যে, এসবের একজন সৃষ্টিকর্তা, নিয়ন্ত্রণকর্তা অবশ্যই আছেন? আর তিনিই হলেন মহান সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, মুক্তিদাতা মহান আল্লাহ্ তা'আলা।
মহান আল্লাহ্ তা'আলার একত্ববাদ কিংবা অস্তিত্বের উদাহরণ কোন মানুষ তে দূরের কথা সৃষ্টিকূলের কারো পক্ষেই তা লিখে শেষ সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন-"হে নবী!
আপনি বলে দিন, যদি লেখার জন্য সমুদ্রের পানিসমূহ কালি বানানো হয় তাহলে আমার কথা, আমার গুণ-গান ইত্যাদি লেখা শেষ না হতেই সাগরের পানিসমূহ শেষ হয়ে যাবে। এরূপভাবে পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের পানি একসাথ করলেও তা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়।"
আমরা কিভাবে আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারি
মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর কিছু গুণাবলী সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা হচ্ছে- "(হে নবী (সাঃ)!) আপনি বলে দিন যে, মহান আল্লাহ্ পাক একক, আল্লাহ্ কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়ান। আর জ্ঞান, শক্তি এবং গুণ-গরীমায় অন্য কেউই তাঁর সমান নয়।"অনাদিকাল থেকেই মহান আল্লাহ্ স্বীয় অস্তিত্ব এবং মহিমার সাথে বিরাজ করছিলেন, করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। সৃষ্টিকূলের উন্নতি-অবনতি, জীবন-মৃত্যু ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াবলী মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়ে থাকে। এ জগতে আল্লাহর কর্তৃত্ব এবং মালিকানা ছাড়া অন্য কারও কোন অধিকার নেই।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে ঘোষণা হয়েছে- "তিনিই আল্লাহ্ যিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ্ বা উপাস্য নেই। তিনি (আল্লাহ্) চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী যাঁকে তন্দ্রা এবং নিদ্রা স্পর্শও করতে পারে না। আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে এসব কিছুর একমাত্র মালিক তিনি (আল্লাহ্)।"
আমাদের মাথার উপর যে সুবিশাল আকাশসমূহ বিস্তৃত রয়েছে অথচ এসবের মধ্যে কোন খুঁটি নেই। একমাত্র আল্লাহর আদেশেই এগুলো প্রতিষ্ঠিত আছে। এ ব্যাপারে মহা পবিত্র কোরআন পাকে ঘোষণা হচ্ছে-"তিনিই আল্লাহ্ যিনি আকাশসমূহকে খুটিহীনভাবে শামীয়ানার মত ঝুলিয়ে রেখেছেন, যা তোমরা দেখছ।"
মানুষকে কয়েকটি উপাদানের সমন্বয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। যথা: আগুন, পানি, বাতাস ও মাটি। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা হচ্ছে- "আল্লাহ্ তিনিই যিনি তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মাটির উপরই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তোমাদেরকে বিচরণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।"
এছাড়াও পৃথিবীর আনাচে-কানাচে, মাঠে-ঘাটে তথা যেদিকেই চোখ যায় সে দিকেই মহান আল্লাহর নিদর্শনাবলী বিরাজমান রয়েছে। এবিষয়ে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআনুল কারীমে ঘোষণা করেন- "বিশ্বের সর্বত্র আমার নিদর্শনাবলী প্রকাশিত হচ্ছে এবং মানুষের নিজের মধ্যেও। তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ না?"
সংক্ষেপে আল্লাহর পরিচয় দাও
আরব বেদুঈন লোকটি বিস্ময়ভরা কন্ঠে উত্তর দিলেন যে, মরুভূমিতে বালির ওপর পায়ের চিহ্ন দেখে যদি পথিকের পরিচয় পাওয়া যায়। দূর হতে ধোঁয়া দেখে যদি আগুনের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে' বাধ্য করে।
তাহলে এ বিশাল আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজি, নদী-নালা, তরঙ্গ ইত্যাদি ফুলে-ফলে ভরা বাগান, বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি মিশ্রিত সুশোভিত পৃথিবীর এত সবকিছু দেখেও কি প্রমাণিত হয় না যে, এসবের একজন সৃষ্টিকর্তা, নিয়ন্ত্রণকর্তা অবশ্যই আছেন? আর তিনিই হলেন মহান সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, মুক্তিদাতা মহান আল্লাহ্ তা'আলা।
মহান আল্লাহ্ তা'আলার একত্ববাদ কিংবা অস্তিত্বের উদাহরণ কোন মানুষ তে দূরের কথা সৃষ্টিকূলের কারো পক্ষেই তা লিখে শেষ সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন-"হে নবী!
আপনি বলে দিন, যদি লেখার জন্য সমুদ্রের পানিসমূহ কালি বানানো হয় তাহলে আমার কথা, আমার গুণ-গান ইত্যাদি লেখা শেষ না হতেই সাগরের পানিসমূহ শেষ হয়ে যাবে। এরূপভাবে পৃথিবীর সমস্ত সমুদ্রের পানি একসাথ করলেও তা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়।"
ঈমানে মুজমাল (সংক্ষিপ্ত ঈমান)
"ঈমানে মুজমাল" অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত ঈমান। যে কালিমার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের বিষয়বস্তুটি সংক্ষিপ্ত ভাষায় প্রকাশ করে থাকি, ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় তাকে ঈমানে মুজমাল বা সংক্ষিপ্ত ঈমান বলে।
أَمَنْتُ وقبلتكَمَا هُوَ بِأَسْمَانِهِ وَصِفَاتِهِ وَقَلْتُ جَمِيعَ احکامه وارگانه .
উচ্চারণ: আমানতু বিল্লাহি কামা হুয়া বিআসমাইহী ওয়া ছিফাতিহী ওয়া ক্বাবিলতু জামী'আ আহ্হ্বামিহী ওয়া আরকানিহী।
অর্থঃ মহান আল্লাহ পাকের জাত এবং ছিফাতসমূহের প্রতি আমি বিশ্বাস স্থাপন করলাম আর মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধসমূহ আমি বিনা দ্বিধায় কবুল গ্রহণ করলাম।
এতে মাত্র কয়েকটি শব্দ রয়েছে। অথচ এর ভেতরেই মানব জীবনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র ফুটে উঠেছে। আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে কোন লোক যদি উক্ত বাক্যসমূহ পাঠ করে তাহলে সে ব্যক্তি জীবনের কোন ক্ষেত্রে এবং কোন বিষয়ে মহান আল্লাহ্ ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারে না। কারণ অন্তরের সাথে সে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর সকল নির্দেশাবলী মান্য করে নিয়েছে।
ঈমানে মুফাচ্ছাল (বিস্তারিত ঈমান)
"ঈমানে মুফাচ্ছাল" অর্থাৎ বিস্তারিত ঈমান। যে কালিমার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের বিষয়বস্তুটি বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করে থাকি, ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় তাকে ঈমানে মুফাচ্ছাল বা বিস্তারিত ঈমান বলে।أمنتُ بِاللهِ وَمَلَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِهِ وَشَرِّه مِنَ اللهِ تَعَالَى وَالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ .
উচ্চারণ : আমানতু বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহী ওয়া কুতুবিহী ওয়া রুসুলিহী ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি ওয়াল ক্বাদরি খাইরিহী ওয়া শাবিরহী মিনাল্লাহি তা'আলা ওয়াল বা'ছি বা'দাল মাওতি।
অর্থ: আমি ঈমান আনলাম মহান আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি এবং তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের ওপর এবং শেষ বিচারের দিনের ওপর এবং তাকদীরের ভাল-মন্দ আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এ কথার প্রতি এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থাপনের প্রতি।
এ কালিমায় সাতটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, এর প্রতিটির উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। এর কোন একটির উপর ঈমান না আনলে সে বেঈমান বা অবিশ্বাসী হবে। কেননা এর কোন একটি বাদ দিলে অন্যগুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপনের কথা প্রমাণিত হবে না।
যেমন কোন লোক মহান আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করল যে, মহান আল্লাহই এ সৃষ্টিকুলের সৃষ্টিকর্তা, প্রতিপালক কিন্তু সে ফিরিস্তাগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করল না, অথবা রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল না, যাদের প্রতি মহান আল্লাহর আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। এতে সে ব্যক্তি ঈমানদার কিংবা মু'মিন হবে না।
যেহেতু এসব বিষয়ের প্রতি ঈমান না আনার অর্থ হল মহান আল্লাহর উপর ঈমান না আনা। আবার কেউ মহান আল্লাহর নির্দেশের উপর ঈমান আনল না অথচ মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করল। এতেও সে ব্যক্তি মু'মিন হবে না।
কেউ আসমানী কিতাবের উপর ঈমান আনল অথচ মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর ঈমান আনল না সে ব্যক্তিও মু'মিন বা ঈমানদার হবে না। ঈমানে মুফাচ্ছালের যে সাতটি বিষয়ের ওপর ঈমান আনার স্বীকারোক্তি করা হল, নিম্নে এ সাতটি বিষয়ের পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হল।


0 Comments