তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, তাহাজ্জুদ নামায পড়ার নিয়ম ও দোয়া, তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
তাহাজ্জুদের নামায
রাত্রি দ্বিপ্রহরের পর হইতে সোবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাযের ওয়াক্ত। ইহা দুই রাকাআত করিয়া পড়িতে হয়। চার রাকাআত হইতে বার রাকআত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামায পড়িবার নিয়ম আছে।
প্রথম অবস্থায় নবী করীম (সঃ)-এর উপর ইহা ফরয ছিল, পরে নফল করিয়া দেওয়া হইয়াছে। তাহাজ্জুদ নামায অতিশয় ফযীলতের নামায। ইহাতে অশেষ সওয়াব রহিয়াছে। কাজেই, প্রত্যেকেরই এই নামায পড়ার অভ্যাস করা উচিত।
তাহাজ্জুদ নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّي لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ التَهَجَدِ سُنَّةُ رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা'আলা-রাক্ 'আতাই ছলাতিত্তাহাজ্জুদি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা'বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
নামায শেষে বিভিন্ন দোয়া-দরূদ ও ইস্তিগফার পড়ে ইচ্ছানুযায়ী মুনাজাত করবে। তাহাজ্জুদ নামাযে প্রতি রাকাতে একাধিক সূরাও পড়া যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজের ৪ ফজিলত
তাহাজ্জুদ একজন মুমিনের জন্য মর্যাদার একটি স্তর। এটি প্রভুর কাছে প্রিয় হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। ফরজ নামাজের পরে তাহাজ্জুদ আদায় করা হয়। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে পাপ মুছে ফেলা হয়। বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। তাহাজ্জুদ হল প্রাণহীন হৃদয়কে পুনরুজ্জীবিত করার সর্বোত্তম উপায়। কুরআন ও হাদিসে তাহাজ্জুদের অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে, নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ ৪টি ফজিলত:
এক. এটি পাপ মুছে দেয়: হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেছেন, 'রাতের নামায সম্পর্কে সাবধান থাকো। কারণ এটি তোমার প্রভুর নৈকট্য অর্জনের এবং তোমার পূর্ববর্তী নেককারদের কর্মকাণ্ডের একটি বিশেষ মাধ্যম। এবং এটি পাপ মোচন এবং পাপ প্রতিরোধের একটি মাধ্যম।' (তিরমিযী: ৩৫৪৯)
দুই. দুআ কবুল হয়: আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সর্বনিম্ন আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, “যে ব্যক্তি সেখানে আছে, সে যেন প্রার্থনা করে, আমি তার প্রার্থনা কবুল করি। যে ব্যক্তি সেখানে আছে, সে যেন আমার কাছে (তার প্রয়োজনের জন্য) প্রার্থনা করে, আমি তাকে দান করি। যে ব্যক্তি সেখানে আছে, আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমি তাকে ক্ষমা করব।” (বুখারী: ১১৪৫)
তিন. মর্যাদা বৃদ্ধি পায়: আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মুমিনের মর্যাদা হলো যে সে রাতে তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ইবাদত করে, এবং তার মর্যাদা হলো যে সে মানুষের উপর নির্ভরশীল হয় না।” (তাবারানী: ৪২৭৮)
চার. জান্নাত অর্জন সম্ভব: আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয়ই, জান্নাতে এমন প্রাসাদ রয়েছে যার ভেতরের অংশ বাইরে থেকে দেখা যায় এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে দেখা যায়।” "আল্লাহ এগুলো তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন যারা মানুষকে খাওয়ায়, সদয় কথা বলে, নিয়মিত রোজা রাখে, সালাম পাঠায় এবং রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজের জন্য দাঁড়ায়।" (মুসনাদে আহমাদ: ২২৯০৫)
সালাতুত তাওবাহর নিয়্যত
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّي لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ التَّوْبَةُ مُتَوَجِهَا إِلَى جِهَةِ الكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা'আলা-রাকা'আতাই ছলা-তিত্তাওবাতি মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা-জিহাতিল্ কা'বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
প্রথমে যে কোন সূরা দিয়ে দু'রাকাত তওবার নামায পড়বে।
সালাতুল হাজত
বিশেষ কোন বালা মুসীবত বা বিশেষ কোন আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য 'কাযায়ে হাজত' নামায পড়ার নিয়ম আছে। দুই রাকাআত নামায নফল হিসাবে পড়িবে এবং সালাতিল হাজতের নিয়ত করিবে। অন্যান্য নফলের মত এই নামাযও আদায় করিবে। নামায শেষ করিয়া নিম্নলিখিত দোয়া পড়িবে।
সালাতুল হাজতের নিয়্যত
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইয়া ফারিজাল হাম্মে কাশিফাল গাম্মি মুজীবাদ্দা ওয়াতিল মুজতারী, আল্লাহুমা ইন্নী আসআলুকা আন তারহামনী রাহমাতাম্ মিন ইনদিকা ওয়া ইনতুগনীনী বিহা মিনরাহমাতি সেওয়াকা।
ছালাতিত্ তাসবীহর নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّي لِلَّهِ تَعَالَى أَرْبَعَ رَكَعَنَى صَلوةِ التَّسْبِيحِ سُنَّةُ رَسُولُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِهَا إِلَى جِهَةِ الكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছোয়াল্লিয়া লিল্লা-হি তা'আলা-আরবা'আ রাক্'আতি ছলাতিত্তাসবীহি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা-জিহাতিল্ কা'বাতিশ শারীফাতে আল্লা-হু আকবার।

0 Comments