মুসাফিরের নামাজ, কখন মুসাফির হিসেবে গণ্য হবেন? মুসাফির ব্যক্তির নামায আদায়ের পদ্ধতি

মুসাফিরের নামাজ, কখন মুসাফির হিসেবে গণ্য হবেন? মুসাফির ব্যক্তির নামায আদায়ের পদ্ধতি

মুসাফিরের নামায, কসর নামাজ কতদিন, কসর নামাজের মাসআলা, মুসাফির এর নামাজের নিয়ম, মাগরিবের কসর, নামাজের নিয়ম, কসর নামাজের শর্ত, কসর নামাজের বাংলা নিয়ত, মুসাফির কারা, কসর নামাজের নিয়ত, মুসাফিরের নামাজ, মুসাফিরের নামাজের বিধান, মুসাফিরের নামাজের নিয়ত, মুসাফিরের নামাজ কয় রাকাত, মুসাফিরের নামাজের বিধান আল কাউসার, মুসাফিরের নামাজ কত রাকাত, মুসাফিরের নামাজ মাসিক আল কাউসার, মুসাফিরের নামাজের বিধান কি, মুসাফিরের নামাজ pdf,

মুসাফিরের (ভ্রমণ অবস্থায়) নামায

কোন লোক স্বীয় বাসস্থান হতে ৪৮ মাইল বা এর চেয়ে বেশি পথ অতিক্রম করে থাকলে, ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় তাকে মুসাফির বলে। অতএব কোন লোক উক্ত পরিমাণ পথ ভ্রমণের নিয়্যতে সম্পূর্ণরূপে বাসস্থান হতে বের হওয়ার সাথে সাথেই মুসাফির বলে গণ্য হবে।

শরী'য়তের দৃষ্টিতে মুসাফির ব্যক্তি যোহর, আছর ও এশার ফরয নামাযসমূহ চার রাক'আতের স্থলে দুরাক'আত করে পড়বে। আর দু'তিন রাক'আতবিশিষ্ট ফরয নামাযে কোনরূপ কছর করতে হবে না; বরং এসব নামায যথারীতি পুরাপুরি আদায় করবে।

মুসাফির অবস্থায় সুন্নত নামাযসমূহের হুকুম হল ব্যস্ততার কারণে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নতসমূহ ছেড়ে দেয়া জায়েয। এতে কোন গুনাহ হবে না।

আর যদি তেমন ব্যস্ততা না থাকে এবং সঙ্গী-সাথীগণকে হারানোর ভয় না থাকে, তাহলে সুন্নত তরক করবে না। সফরের অবস্থায় সুন্নত নামাযসমূহের কছর হয় না বলে, তা পুরোপুরিভাবেই আদায় করবে।

যোহর, আছর এবং এশা এ তিন ওয়াক্তের ফরয দুরাক'আত করেই পড়বে। ইচ্ছাপূর্বক চার রাক'আত করে পড়লে গুনাহগার হবে। যেমন-কোন লোক যোহরের নামায (চার রাক'আতের স্থলে) ছ'রাক'আত পড়লে গুনাহ্ হয়ে থাকে।

ভ্রমণ অবস্থায় যদি কোন লোক ভুলে চার রাক'আত পড়ে ফেলে, তবে যদি দুরাক'আতের পর বসে তাশাহ্হুদ পড়ে থাকে, তাহলে ফরয আদায় হয়ে যাবে এবং অতিরিক্ত দুরাক'আত নফল হবে এবং সাহু সিজদাহ্ দিতে হবে।

আর যদি দুরাক'আতের পর না বসে থাকে, তবে ফরয আদায় হবে না; বরং চার রাক'আতই নফল হবে এবং নতুন করে পুনরায় ফরয আদায় করতে হবে।

যদি কোন লোক ৪৮ মাইল পথ অতিক্রম করার পর, সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম সময় থাকার নিয়্যত করে, তাহলে সে ব্যক্তি সেখানে মুসাফির হিসেবে কসর পড়বে। যদি সেখানে গিয়ে ১৫ দিন বা আরও বেশিদিন পর্যন্ত থাকার নিয়্যত করে থাকে তাহলে ঐ নিয়্যতের পরবর্তী নামায পুরাই পড়তে হবে।

১৫ দিনের উর্ধে থাকার নিয়্যত করে যদি পুনরায় ১৫ দিনের আগেই চলে যাওয়ার ইচ্ছা করে তাহলেও পুরা নামাযই পড়তে হবে। এভাবে ১৫ দিন থাকার নিয়্যত করে মুকীম হওয়ার পর যখন ঐ স্থান হতে অন্য স্থানে রওয়ানা করতে হবে, যে স্থানে যাওয়ার ইচ্ছা করছে।

তাহলে দেখতে হবে বর্তমান অবস্থানের স্থান হতে সে স্থানের দূরত্ব কত? যদি তা আটচল্লিশ মাইল হয়, তবে আবার কছর পড়তে হবে। আর যদি কম হয় তবে কসর পড়তে হবে না, পুরা নামাযই পড়তে হবে।

সফরের পূর্বে মুকীম থাকা অবস্থায় যদি কারও নামায ছুটে থাকে এবং সফরের অবস্থায় ঐ নামায আদায় করতে চাইলে চার রাক'আতই আদায় করতে হবে। তদ্রূপ সফরের অবস্থায় কারও নামায ছুটে গেলে সফরের পর মুকীম অবস্থায় আদায় করতে হলে দুরাক'আতই আদায় করতে হবে।

সুন্নত এবং ওয়াজিব নামাযের কোনরূপ কছর নেই। তবে সুন্নত না পড়লেও কোন গুনাহ্ নেই, কিন্তু ওয়াজিব নামায অবশ্যই পড়তে হবে।

যানবাহনে নামায পড়ার নিয়ম-কানুন

বিনা ওযরে বাস, গাড়ি, নৌকা, স্টিমারে বসে নামায পড়লে তা আদায় হবে না। যানবাহন যখন যেদিকে ঘুরবে নামাযী ব্যক্তিকেও সেদিকে ঘুরতে হবে। কারণ কিবলামুখী হওয়া ছাড়া অন্যদিকে মুখ করা মাকরুহ।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর বাণী-"তোমরা যেখানেই থাক না কেন, যখনই নামায পড়ার ইচ্ছা করবে, তখন কিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়বে।"

কিবলামুখী হয়ে যখন নামায পড়া ফরয সাব্যস্ত হয়ে গেল; কাজেই যানবাহনে কিবলা যেদিকেই হউক নামাযীকেও সেদিকে ঘুরতে হবে। (শামী)

নৌকা, স্টিমার যদি ঘাঁটে বাঁধা থাকে, তাহলে বসে নামায পড়া জায়েয হবে না। ওযর থাকলে অবশ্য অন্য কথা। সম্ভব হলে চলন্ত যানবাহন হতে নেমে দাঁড়িয়ে নামায পড়বে। কেননা নামাযের মধ্যে দাঁড়ান ফরয।

রুগ্ন ব্যক্তির নামাযের বিবরণ

কোন অবস্থাতেই নামায পড়া বাদ দেয়া যাবে না। যতক্ষণ নামায দাঁড়িয়ে পড়তে সক্ষম হবে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়বে। আর যদি দাঁড়াতে অক্ষম 'হয় তাহলে বসে বসে নামায পড়বে এবং রুকু-সিজদাহ্ করবে। রুকুতে এমনভাবে ঝুঁকবে যেন কপাল হাঁটু বরাবর হয়।

সিজদাহ্ করার জন্য বালিশ ইত্যাদি কোন উঁচু জিনিস রাখা এবং এর উপর সিজদাহ্ করা অনুচিত। সিজদাহ্ করতে অক্ষম হলে ইশারা-ইঙ্গিতে সিজদাহ্ করবে। বালিশ বা কোন উঁচু বস্তুর উপর সিজদাহ্ করার প্রয়োজন নেই।

যদি কোন রোগীর এমন অবস্থা হয় যে, সে দাঁড়াতে পারে কিন্তু রুকু-সিজদাহ্ করতে পারে না, তবে তার জন্য দুটি ব্যবস্থাই জায়েয। হয়ত সে দাঁড়িয়ে নামায পড়ুক এবং রুকু-সিজদাহ্ ইশারায় করুক, অথবা সে বসে নামায পড়ুক এবং ইশরায় রুকু-সিজদাহ্ করুক। অবশ্য এমন অবস্থা হলে নামায বসে পড়াই উত্তম।

কোন রোগীর নিজ ক্ষমতায়ও বসার শক্তি না থাকলে বালিশ বা দেয়ালে হেলান দিয়ে যদি অর্ধেকভাবে বসা অবস্থায় শুইতে পারে, তবে তাকে সেরূপ বালিশ মাথা এবং পিঠের নিচে দিয়ে পশ্চিম দিকে মুখ করে শোয়াবে, যাতে কিছুটা বসার মত অবস্থা হয় এবং পা দুটি কিবলার দিকে ছড়িয়ে দেবে।

আর যদি পা গুটিয়ে হাঁটু খাড়া রাখতে পারে, তবে সেরূপ করে দেবে। হাঁটু খাড়া করতে না পারলে হাঁটুর নিচে বালিশ রেখে দেবে, তাহলে পা কিবলার দিক হতে যথাসম্ভব ফিরে থাকবে। কারণ বিনা ওযরে কিবলার দিকে পা ফিরিয়ে রাখা মাকরুহ।

এরূপ বসে মাথার ইশারায় রুকু-সিজদাহ্ করে নামায পড়বে তবুও নামায ত্যাগ করা যাবে না। অবশ্য রুকু অপেক্ষা সিজদাহর জন্য একটু বেশি ঝুঁকবে। যদি এরূপ হেলান দিয়েও বসতে না পারে তবে মাথার নিচে একটু উঁচু বালিশ দিয়ে শোয়ায়ে দেবে, যাতে মুখমণ্ডল আকাশের দিকে না থেকে কিছুটা কিবলার দিকে থাকে।

এরপর মাথার ইশারায় রুকু-সিজদাহ্ আদায় করে নামায পড়বে। রুকুর ইশারা একটু কম এবং সিজদাহর ইশারা একটু বেশি করবে।

কোন রোগীর সুস্থ থাকাকালীন সময়ে কিছু নামায ক্বাজা হয়েছিল, এখন বসে কিংবা শুয়ে, ইশারায় নামায আদায় করে, ক্বাজা নামাযগুলোও সেভাবেই আদায় করে নেবে। কখনও এরূপ ধারণা করবে না যে, সুস্থ হয়ে ক্বাজা আদায় করবে বা দাঁড়ানোর ক্ষমতা ফিরে পেয়ে পড়বে।

এসব চিন্তা করা শয়তানী প্রতারণা। সুতরাং এরূপ খেয়াল না করে যখন স্মরণ হয় তখনই পড়ে নেবে। কোনক্রমেই দেরী করা ঠিক হবে না।

রোগীর বিছানা নাপাক হলে এবং সে বিছানা পরিবর্তন করতে রোগীর পক্ষে কষ্টকর কিংবা আদৌ সম্ভব না হলে ঐ বিছানায়ই নামায পড়বে।

রোগীর অবস্থা যদি এমন মারাত্মক হয় যে, রুকু-সিজদাহ্ করে নামায পড়তে পারে না। নিয়্যত করে দুরাক'আত নামায পড়েছে। এরপর বসে বা দাঁড়িয়ে রুকু-সিজদাহ্ করার মত শক্তি আসে, তবে যখন এরূপ শক্তি পাবে তখনই পূর্ববর্তী নামাযের নিয়্যত বাতিল হয়ে যাবে এবং নতুন ভাবে নিয়্যত করে বসে বা দাঁড়িয়ে নামায পড়তে হবে।

Post a Comment

0 Comments