জুমু'আর নামাযের বিবরণ, জুমার নামাজের নিয়ত, জুমার নামাজের ফজিলত, গুরুত্ব ও হাদিস
জুমু'আর নামাযের বিবরণ
সপ্তাহের দিনসমূহের মধ্যে শুক্রবার সর্বশ্রেষ্ঠ। কেননা এ দিনটিতে মানুষ সবচেয়ে বেশি নি'আমাত লাভ করে। এ দিন মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন।
জামা'আতের ফযীলত ও ফায়দা সম্পর্কে ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায একই পাড়ার বা মহল্লার লোকের জামা'আতে আদায় করা সম্ভব। কিন্তু দূরবর্তী পাড়া ও মহল্লার লোকদের পক্ষে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জামা'আতে উপস্থিত হওয়া খুবই কষ্টকর।
এ জন্য মহান আল্লাহ্ পাক স্বীয় বান্দাদের সুবিধার জন্য ইচ্ছা করলেন যে, সপ্তাহে অন্তত একটি দিন বিশেষভাবে তাঁর ইবাদত করুক। এ জন্যই তিনি এ দিনটিকে নির্ধারিত করে দিলেন। পূর্ববর্তী নবীগণের উম্মতদের জন্যও এ দিনে উপাসনা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতেরা তাদের দুর্ভাগ্যের কারণে এ ব্যাপারে মতানৈক্য করল। সে অবাধ্যতার ফল হল, তারা এ পুণ্যময় দিনের সৌভাগ্য লাভ হতে বঞ্চিত হল এবং এদিনের ফযীলত উম্মতে মুহাম্মদীর ভাগে পড়ল। কারণ ইয়াহুদীরা শনিবার দিন, আর নাছারাগণ রবিবার দিন তাদের উপাসনার দিন ধার্য্য করল।
এ জন্য যেখানে মুসলমানদের প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে, সেখানে জুমু'আর নামায যথানিয়মে আদায় করে। পক্ষান্তরে যেখানে নাছারার আধিপত্য ও প্রভাব বেশি, সেখানে তারা রবিবার দিনকে তাদের ইবাদতের জন্য নির্ধারিত করে; সরকারী ছুটি হিসেবে সকল অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখে।
জুমু'আর নামাযের ফযীলত
ইতিপূর্বে জুমু'আর দিনের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে, এখানে জুমু'আর নামাযের ফযীলত সম্পর্কে কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হল।
হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে- "যে ব্যক্তি জুমু'আর দিনে গোসল করে পাক-পবিক হয়ে যথাসাধ্য সুন্দর কাপড়-চোপড় পরিধান করে জুমু'আর নামাযের জন্য মসজিদে যাবে এবং মসজিদে গিয়ে কাকেও তাদের স্থান হতে না সরিয়ে যেখানে স্থান পাবে সেখানে দাঁড়িয়েই নামাযসমূহ আদায় করবে।
এরপর যখন ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করবেন, মনোযোগসহকারে চুপচাপ ভাবে খুতবা শুনবেন, তাহলে তার বিগত জুমু'আ হতে এ জুমু'আ পর্যন্ত সকল প্রকার (সগীরা) গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।” (বুখারী শরীফ)
অন্য এক হাদীসে উল্লেখ আছে- "মানুষ যেন কিছুতেই জুমু'আর নামায ত্যাগ না করে, অন্যথায় তাদের অন্তরে মোহর করে দেয়া হবে। এরপর মারাত্মক ঔদাসিন্যে ডুবে থাকবে।” (মুসলিম শরীফ)
জুমু'আর নামাযের নিয়্যতসমূহ
তাহিয়্যাতুল অযু দুরাক'আত নামাযের নিয়্যত
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ التَّحِيَّةُ الْوُضُوءِ سُنَّةُ رَسُولِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِهَا إِلى جِهَةِ الكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই ছালাতিত্ তাহিয়্যাতুল অযুয়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ: তাহিয়্যাতুল অযু দুরাক'আত সুন্নত নামায আদায় করার জন্য কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।
দুখুলুল মাসজিদ দুরাক'আত নামাযের নিয়্যত
نويتُ أَنْ أُصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ الدَّخُولِ الْمَسْجِدِ سُنَّةُ رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِهَا إِلى جِهَةِ الكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই ছালাতিদ্ দুখূলিল মাসজিদি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'অবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ: দুখূলিল মাসজিদ দু'রাক'আত সুন্নত নামায আদায় করার জন্য কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।
ক্বাবলাল জুমু'আ চার রাক'আত নামাযের নিয়্যত
نويتُ أَنْ أُصَلِّي لِلهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُولِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِهَا إِلى جِهَةِ الكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللهُ أَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবা'আ রাক'আতি ছালাতি ক্বাবলাল জুমু'আতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ: ক্বাবলাল জুমু'আ চার রাক'আত সুন্নত নামায আদায় করার জন্য কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।
জুমু'আর দু'রাক'আত ফরয নামাযের নিয়্যত
نويت أَنْ أَسْقِطَ عَنْ ذِمَّتِي فَرْضُ الظَّهْرِ بِأَدَاءِ رَكَعَتَى صَلَواتِ الْجُمُعَةِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى اقْتَدَيْتُ بِهَذَالْإِمَامِ مُتَوَجِهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসক্বিত্বা 'আন যিম্মাতী ফারদ্বযয্যহরি বিআদায়ি রাক'আতাই ছালাতিল জুমু'আতি ফারদুল্লাহি তা'আলা ইক্বতাইতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'অবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ: যোহরের ফরয নামাযের দায়িত্ব হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য দু'রাক'আত জুমু'আর নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।
বা'দাল জুমু'আ চার রাক'আত নামাযের নিয়্যত
نويت أنْ أُصَلِّي لِلَّهِ تَعَالَى وَكَعَنَى صَلوةِ بَعْدَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُولِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِهَا إِلى جِهَةِ الكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবা'আ রাক'আতি ছালাতি বা'দাল জুমু'আতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থ: বা'দাল জুমু'আ চার রাক'আত সুন্নত নামায আদায় করার জন্য কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।
ওয়াক্তি সুন্নত দুরাক'আত নামাযের নিয়্যত
نويت أنْ أُصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى رَكَعَنَى صَلوةِ الْوَقْتِ سُنَّةُ رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাক'আতাই ছালাতিল ওয়াক্বতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
জুমু'আ সম্পর্কীত কতিপয় মাসয়ালা
জুমু'আর নামায সম্পর্কে নিম্নলিখিত মাসয়ালাসমূহ জেনে রাখা প্রত্যেকের জন্য জরুরি।
যিনি খুতবা পাঠ করবেন জুমু'আর নামাযের ইমামতিও তিনিই করবেন। অবশ্য অনুমতি পেয়ে অন্য কেউ ইমামতি করলেও জায়েয হবে।
খুতবা দেয়া শেষ হলে ইকামাত বলে নামায আরম্ভ করা সুন্নত। খুতবাহ্ ও নামাযের নিয়্যতের মধ্যবর্তী সময়ে দুনিয়াবী কোন কাজ করা মাকরূহে তাহরিমী। খুতবা দেয়ার পর নামাযের নিয়্যত করতে দেরি হলে পুনরায় খুতবা পাঠ করতে হবে। কোন জরুরি প্রয়োজন যেমন অযু ভঙ্গ হলে অযু করে আসতে গেলে স্বতন্ত্র কথা।
এক এলাকার সকল লোকের একই মসজিদে জুমু'আর নামায আদায় করা উত্তম। তবে একই এলাকার কয়েকটি মসজিদে জুমু'আ পড়লেও নামায আদায় হবে।
যদি কোন লোক জুমু'আর জামা'আতে তাশাহ্হুদ পাঠের সময়ে কিংবা সাহু সিজদাহর পর ইমামের সাথে শরীক হয়, তাহলে যথারীতি দুরাক'আত জুমু'আর ফরয আদায় করবে। এজন্য ওয়াক্তের ফরয আদায়ের জন্য যোহরের চার রাক'আত পড়ার প্রয়োজন নেই। জুমু'আর দুরাক'আত ফরযেই ওয়াক্তের ফরয আদায় হয়ে যাবে।
কোন কোন লোক দেখা যায়, সন্দেহমূলকভাবে আবার যোহরও পড়ে থাকে, যার ফলে সাধারণ লোকের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। সুতরাং এ ব্যাপারে তাদেরকে একেবারেই নিষেধ করে দেয়া উচিত। অবশ্য কোন 'আলেম লোক সন্দেহের স্থলে পড়তে চাইলে এমনভাবে পড়বে যাতে কেউ নিয়্যত জানতে না পারে।
উপস্থিত মুসল্লীদের সকলের জন্য খুতবা শুনা ওয়াজিব। যে শুনতে পারছে না সেও শ্রোতার মধ্যে গণ্য।
সুন্নত কিংবা নফল নামায পড়ার সময় যদি খুতবা আরম্ভ হয়ে যায়, তাহলে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ-এর নামায হলে, সে নামায পুরা করে নেবে। আর যদি নফল হয়, তাহলে দু'রাক'আত পড়েই সালাম ফিরাবে।

0 Comments