নারী পুরুষের নামাজের পার্থক্য, নারী পুরুষের নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম, পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের প্রভেদ
পুরুষ ও মহিলাদের নামাযের প্রভেদ
পুরুষ এবং মহিলাদের নামাযের মধ্যে অনেক প্রভেদ আছে। নিম্নে মহিলাদের নামাযের নিয়ম আলোচনা করা হল।
তাকবীরে তাহরীমা: পুরুষরা তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাত উপরের কানের লতির সাথে লাগাবে এবং বাম হাতের উপর ডাম হাত কব্জি ও হাতের তালুর পিঠে রেখে নাভীর চার আঙ্গুল নিচে বা নাভী বরাবর উপরে বেঁধে যথানিয়মে নীরবে ও উচ্চৈঃস্বরে সূরা-কিরাআত পাঠ করবে।
মহিলারা কাপড়ের আবরণীতে রেখে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে এবং বাম হাতের পিঠের উপর ডান হাতের তালু রেখে বুকের উপর বেঁধে যথারীতি নীরবে সূরা কিরাআতসমূহ পাঠ করে নামায শেষ করবে। কোনমতেই মহিলাদের আওয়াজ বড় হতে পারবে না।
পোশাক-পরিচ্ছদ: পুরুষরা ইসলামী বিধান অনুযায়ী ছতর ঢেকে শালীনতা রক্ষা করে পাক-পবিত্র পোশাক পরে নামায আদায় করবে।
মহিলাদের কেবল মুখমণ্ডল এবং হাত ও পায়ের তালু ব্যতীত সমস্ত শরীরই ছতর। সুতরাং মহিলারা সমস্ত শরীর ঢেকে নামায আদায় করতেন।
দাঁড়ানো: পুরুষরা নামাযে দাঁড়ানোর জন্য পদদ্বয়ের মাঝখানে অন্তত চার আঙ্গুল ফাঁক করে দাঁড়াবে। তবে যদি কোন মোটা লোক হয় তাহলে তাঁর শরীরের ভারসাম্যতা রক্ষা হওয়ার মত ফাঁক করে দাঁড়াবে।
মহিলাদের জন্য দাঁড়ানোর নিয়ম হল, সর্বাবস্থায়ই তারা পদদ্বয়ের গোড়ালি সমান বরাবর লাগিয়ে দাঁড়াবে। ফরয নামাযসমূহ দাঁড়িয়ে পড়তে হবে আর অন্যান্য নামায বসে পড়তে পারবে। বসে নামায পড়লে অর্ধেক ছাওয়াব পাওয়া যাবে।
কিরাআত : পুরুষরা তারতীব অনুযায়ী কোন কিরাআত উচ্চৈঃস্বরে আবার কোন কিরাআত নীরবে পাঠ করবে।
মহিলারা সর্বাবস্থায়ই নীরবে সূরা-কিরাআতসমূহ পাঠ করবে কোন অবস্থাতেই মহিলাদের আওয়াজ উচ্চ হতে পারবে না।
রুকু: পুরুষদের রুকু করার নিয়ম হল, তারা হাত-পা ফাঁক রেখে দু'হাঁটুর উপর দু'হাতের তালু রেখে রুকু করবে।
মহিলাদের রুকু করার নিয়ম হল, তারা দু'হাতের বাহু বগলের সাথে মিলায়ে মাথা সামান্য একটু ঝুঁকায়ে হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে হাঁটু স্পর্শ করে রুকু করবে।
সিজদাহ্: পুরুষরা সিজদাহ্ করার সময় সোজাসুজিভাবে সিজদায় যাবে এবং হাত-পা, আঙ্গুল, উরু সবগুলো অঙ্গ একটি হতে অপরটি ফাঁকা-ফাঁকা রাখবে।
মহিলারা রুকু করার সময় সমস্ত শরীরের অঙ্গসমূহ একসাথে মিলায়ে রেখে জড়সড় হয়ে দাঁড়াবে, যাতে কোনরূপ ফাঁক না থাকে।
বৈঠক: পুরুষরা বসার সময় বাম পা বিছায়ে বাম পায়ের উপর বসবে এবং ডান পায়ের আঙ্গুলের মাথাসমূহ কেবলামুখী করে পাতা খাড়া রাখবে।
মহিলারা উভয় পা ডানদিকে বের করে চোতড়ের উপর বসবে।
সালাম: পুরুষরা সালাম ফিরানোর সময় উভয় দিকে কেবল ঘাড় ও মুখমণ্ডল ফিরাবে।
মহিলারা সালাম- ফিরানোর সময় সামান্য একটু মুখ ফেরাবে।
মুনাজাত: পুরুষরা হাতের তালুর সাথে হাত মিলায়ে একটু প্রশস্ত করে মুনাজাত দিবে।
মহিলারা কাপড়ের ভিতরে হাত রেখে মুনাজাত করবে। কোন অবস্থায়ই-কাপড়ের ভিতর হতে হাত বের করতে পারবে না।
দুই, তিন ও চার রাক'আত বিশিষ্ট নামায আদায়ের নিয়ম
দুরাক'আত বিশিষ্ট নামায আদায় করতে হলে নিয়্যত করার পর তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে ছানার দোয়া, তা'আউয়্যুয, তাসমিআহ্ পাঠ করার পর সূরা ফাতিহা শেষ করে একটি সূরা কিংবা কোরআন শরীফের বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ পাঠ করে তাকবীর বলে রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ আদায় করে "তাসমী" বলে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে উল্লেখিত দোয়া পাঠ করে আবার তাকবীর বলে সিজদাহতে যাবে।
এরপর প্রথম সিজদাহ আদায় করে দ্বিতীয় সিজদাহর পর তাকবীর বলে দাঁড়াবে, এরপর কেবল সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর কিরাআত পাঠ করে পূর্বের মত রুকু-সিজদাহ্ আদায় করে বসে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ, ও দোয়ায়ে মাছুরা পাঠ করে যথারীতি দু'দিকে সালাম ফিরায়ে নামায় শেষ করবে।
তিন রাক'আত বিশিষ্ট নামায আদায় করতে হলে উল্লিখিত নিয়মে দুরাক'আত নামায আদায়ের পর বসে (কেবল ফরযের বেলায়) তাশাহুদ পাঠ করে দাঁড়ায়ে যাবে এবং তৃতীয় রাক'আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে, অন্য কোন সূরা-কিরাআত মিলাতে হবে না।
এরপর যথারীতি রুকু-সিজদাহ আদায় করে শেষ বৈঠকে বসেও যথারীতি তাশাহ্হুদ, দরূদ ও দোয়ায়ে মাছুরা শেষ করে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবে। আর যদি ফরয নামায না হয়ে অন্য নামায হয়, তাহলে সূরা ফাতিহার সাথে প্রতি রাক'আতেই অন্য সূরা মিলাতে হবে।
চার রাক'আত বিশিষ্ট নামায হলে যদি উক্ত নামায ফরয হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম দুরাক'আতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা-কিরাআত পাঠ করতে হবে। পরবর্তী দুরাক'আতে শুধুমাত্র সূরা ফাহিতা পাঠ করবে অন্য সূরা কিরাআত মিলাতে হবে না। আর যদি সুন্নত বা নফল হয় তাহলে প্রথম বৈঠকে পুরা তাশাহহুদ পাঠ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাক'আতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা-কিরাআত মিলিয়ে যথারীতি রুকু-সিজদাহ্ আদায় করে সালামের মাধ্যমে নামায শেষ করবে।

0 Comments