পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাসবিহ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাসবিহ অর্থ, ৫ ওয়াক্ত নামাজের রুকু সিজদাহ্ তাসবীহ ও সব দোয়া সমূহ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাসবিহ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাসবিহ অর্থ, ৫ ওয়াক্ত নামাজের রুকু সিজদাহ্ তাসবীহ ও সব দোয়া সমূহ

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাকবীর কী?, নামাজের তাসবিহ কিভাবে পড়তে হয়?, নামাজের শুরুতে কী পড়তে হয়?, phass wakto namazer tasbih, পাচ ওয়াকত নামাজের তাসবিহ পডার নিয়ম কী?, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কোন কোন তাসবিহ কতবার পড়া হয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত বাংলায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আমল pdf, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত আরবিতে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর অজিফা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সূরা, ফরজ নামাজের পর তাসবিহ সমূহ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচী, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাসবিহ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাসবিহ অর্থ, ৫ ওয়াক্ত নামাজের রুকু সিজদাহ্ তাসবীহ ও সব দোয়া সমূহ,

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তাসবিহ

তাসবীহে ফাতেমী: পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে-একদা হযরত ফাতিমা (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ)-এর খিদমতে আরয করলেন, হে আব্বাজান! সারাদিন সাংসারিক কাজে ও আটা পিষার কারণে আমার শরীরটা ব্যথা-বেদনা হয়ে যায়।

সুতরাং আমার একজন দাসী হলে সে আমার সাংসারিক কাজে সাহায্য করলে আমার অনেক উপকার হবে। ফাতিমা (রাঃ)-এর মুখে এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তর করলেন, হে মা ফাতিমা!

মহিলাদের জন্য স্বামীর বাড়ীতে স্বামী ও তার পরিজনদের খিদমতের জন্য আটা পিষা (ধান ভানা) এবং গৃহকাজের আঞ্জাম দেয়ার মত নেকের কাজ আর কিছু নেই।

কিন্তু কোন ভৃত্য-চাকর, বাঁদী ইত্যাদির সাহায্য নেয়া হলে সে কাজের ছাওয়াব পাওয়া যাবে না। সুতরাং মা! তুমি বরং রাতে ঘুমাবার সময় নিম্নলিখিত দোয়াসমূহ পাঠ করে ঘুমাবে। আল্লাহর ইচ্ছায় নিশ্চয়ই তোমার শরীরের ব্যথা-বেদনা দূর হয়ে যাবে।

আর সর্বদা তোমার শরীর সুস্থ ও সবল থাকবে এবং এতেও অতিরিক্ত ছাওয়াব পাবে। হযরত ফাতিমা (রাঃ) বলেন, সত্যই আমি মহানবী (সাঃ)-এর এ নির্দেশানুযায়ী 'আমল করার ফলে আমার শরীরে কোনরূপ ব্যথা-বেদনা কিংবা দুঃখকষ্ট অনুভব হয়নি।

উপরোল্লেখিত আলোচনা হতে বুঝা গেল, অহংকার, হিংসা, বখিলী ইত্যাদি অন্তরের অসৎ স্বভাবসমূহ দূরীভূত করে সন্তুষ্টচিত্তে সদাসর্বদা নিজেদের গৃহকার্য করবে এবং সর্বদা নিম্নলিখিত দোয়াটি পাঠ করবে। বিশ্বাসের সাথে এ দোয়াটি পাঠ করলে নিশ্চয়ই তাদের শরীর রোগমুক্ত, সুস্থ ও সবল থাকবে এবং অত্যধিক ছাওয়াবের অধিকারী হবে।

سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ .

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

অর্থ: মহান আল্লাহ্ পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। আর তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই এবং আল্লাহ অনেক মহান।

রাসূলে কারীম (সাঃ) পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ করেছেন, উল্লেখিত তাসবীহ পাঠ করার সময় খুবই সহজ মনে হয় এবং মহান আল্লাহর নিকটও খুবই প্রিয়। আর উল্লেখিত নিয়ম ছাড়াও প্রতি ওয়াক্ত নামায শেষে অঙ্গুলিতে হিসেব করে নিম্নোক্ত তাসবীহসমূহ ১০০ বার পাঠ করবে।

১। ফজরের পর ১০০ বার পাঠ করবে- هو الحي القيوم (হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুমু) মহান আল্লাহ চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী।

২। যোহরের পর ১০০ বার পাঠ করবে- هو العلي العظيم (হুয়া 'আলীয়্যুল 'আযীমু) মহান আল্লাহ অতীব মর্যাদাশালী।

৩। আছরের পর ১০০ বার পাঠ করবে - هو الرحمن الرحيمُ (হুয়ার রাহমানুর রাহীমু) মহান আল্লাহ অনেক দয়ালু ও মেহেরবান।

৪। মাগরিবের পর ১০০ বার পাঠ করবে - هو الغفور الرحيم (হুয়াল-গাফুরুর রাহীমু) মহান আল্লাহ গুনাহসমূহ ক্ষমাকারী ও দয়ালু।

৫। এশার পর ১০ বার পাঠ করবে - هو اللطيف الخبير (হুয়াল্লাত্বীফুল খাবীরু) মহান আল্লাহ সূক্ষ্ম বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞাত আছেন।

নামাযের আহকাম ও আরকান

নামায আদায়ের জন্য কতগুলো নিয়মকানুন আছে যেগুলো আদায় করা ফরয বা অবশ্য কর্তব্য। এগুলোর কোন একটি বাদ পড়লে নামায আদায় হবে না। আরবি পরিভাষায় এগুলোকে আহ্কাম ও আরকান বলে। নিম্নে এগুলো পৃথকভাবে আলোচনা করা হল।

আহ্কাম ৬টি: নামাযের বাইরের ছটি কাজ সমাধা করা ফরয। যথাঃ (১) সমস্ত শরীর পাক হওয়া। (২) কাপড়-চোপড় পাক-পরিষ্কার হওয়া। (৩) নামাযের বিছানা পাক-পরিষ্কার হওয়া।

(৪) ছতর ঢাকা (পুরুষের নাভী হতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর মহিলাদের দুহাত, পায়ের তালু ও মুখমণ্ডলের শুধু চোখ দুটি দেখা যায় এমনভাবে পোশাক-পরিচ্ছদে আবৃত রাখাকে ছতর ঢাকা বলে)।(৫) কিবলামুখী হওয়া। (৬) নিয়্যত করা (যে নামায আদায় করবে সে ওয়াক্তের সে নামাযের নাম উল্লেখ করে নিয়ত করা।)

আরকান ৭টি: নিয়্যত বেঁধে নামাযের ভেতর সাতটি কাজ সমাধা করা ফরয। যথা: (১) দাঁড়ায়ে নামায আদায় করা (২) তাকবীরে তাহরীমা বলা। (৩) আলহামদু সূরার সাথে কিরাআত পাঠ করা। (৪) রুকু করা। (৫) সিজদাহ্ করা। (৬) শেষ বৈঠক করা। (৭) সালাম ফিরায়ে নামায হতে ফারেগ-হওয়া।

নামাযের ওয়াজিবসমূহ

নামায আদায়ের জন্য অবশ্য করণীয় কাজসমূহের বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। নামায আদায়ের জন্য যেসব কাজসমূহ ওয়াজিব সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল।

(১) নামাযের প্রতি রাক'আতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। (২) সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যে কোন একটি সূরা বা কিরাআত পাঠ করা। (৩) সুন্নত ও নফল নামাযসমূহের প্রতি রাকা'আতে কিরাআত পাঠ করা। (৪) ফরয নামাযসমূহের প্রথম দুরাক'আতে কিরাআত পাঠ করা এবং সূরা-কিরাআতসহ নামাযের অন্যান্য কাজসমূহ ধারাবাহিকভাবে আদায় করা।

(৫) রুকু ও সিজদাহ্ করার সময় তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় দেরী করা। (৬) রুকু হতে সোজাভাবে খাড়া হওয়া। (৭) দুসিজদাহর মাঝখানে সোজা হয়ে বসে ধীরস্থির ভাবে দ্বিতীয় সিজদাহ্ আদায় করা। (৮) বৈঠকদ্বয়ে তাশাহুদ পাঠ করা। (৯) ফজর, মাগরিব, এশা, জুম্মাহ ও দুঈদের নামাযের প্রথম দু'রাক'আতে উচ্চস্বরে কিরাআত পাঠ করা।

(১০) যোহর ও আছরের নামাযে কিরাআত নীরবে পাঠ করা। (১১) বেতের নামাযের শেষ রাকা'আতে দোয়ায়ে কুনূত পাঠ করা। (১২) দু'ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা। (১৩) নামাযের কিরাআত পড়ার সময় তিলাওয়াতে সিজদাহ আসলে সাথে সাথে তা আদায় করা।

(১৪) মুক্তাদিগণের জন্য সর্বদা ইমামের অনুসরণ করা। (১৫) বেতের নামাযের তৃতীয় রাক'আতে সূরা-কিরাআত পাঠ করার পর দ্বিতীয় তাকবীর বলা। (১৬) দু'দিকে সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করা। (শরহে বেকায়াহ্)

বর্ণিত ওয়াজিবসমূহের মধ্যে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন একটি কাজ বাদ পড়লে সাহু সিজদাহ্ দিতে হবে। কেননা সাহু সিজদাহ্ না দিলে নামায অসম্পূর্ণ থাকবে।

নামাযের সুন্নতসমূহ:

নামায আদায়ের জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলো আদায় করা সুন্নত।
(১) নামাযের সময় হলে জামা'আতের উদ্দেশ্যে আযান দেয়া। (২) ফরয নামাযের জন্য ইকামাত বলা। (৩) তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় দুকানের লতি পর্যন্ত হাত উঠান। (৪) হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলসমূহ পৃথক করে রাখা। (৫) জামা'আতের সাথে নামায আদায় করা

(৫) জামা'আতের সময় কাতার সোজা করে দাঁড়ান। (৭) নিয়্যত করার পর পুরুষেরা বাম হাতের পিঠের উপর ডান হাতের তালু দিয়ে নাভীর নিচে চেপে ধরা, আর মহিলাদের জন্য উক্ত নিয়মে হাত বেঁধে বুকের উপর রাখা। (৮) ইমাম সাহেবদেরকে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর এবং তাসমী' পাঠ করা।

(৯) মুক্তাদিগণ নীরবে তাহমীদ বলা। (১০) তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে ছানার দোয়া পড়ার পর সূরা ফাতিহার পূর্বে আ'উযুবিল্লাহ্ ও বিসমিল্লাহ্ সম্পূর্ণ পাঠ করা। (১১) সূরা ফাতিহার পর মনে মনে আমিন বলা। (১২) নামাযে উঠা বসার জন্য তাকবীর ও তাসমী' পাঠ করা। (১৩) রুকু-সিজদাহ করার সময় কমপক্ষে তিনবার করে তাসবীহসমূহ পাঠ করা। (১৪) রুকু করার সময় দুহাতের তালু হাঁটুর উপর রাখা। (১৫) রুকু করার সময় মাথা ও পিঠ সমানভাবে সোজা রাখা।

(১৬) সিজদাহ দেয়ার সময় প্রথমে দুহাঁটু এরপর দুহাতের তালু, এরপর কপাল ও নাক জমিনে রাখা। (১৭) সিজদাহ করার সময় দুহাতের আঙ্গুলের মাথাসমূহ এবং মাথা ও মুখ কিবলামুখী করে রাখা। (১৮) সিজদাহ করার সময় হাতের কনুই জমিন হতে উঠিয়ে এবং পেট ও উরু হতে পৃথক রাখা।

(১৯) সিজদাহ্ হতে উঠার সময় তাকবীর বলা। (২০) সিজদাহ হতে উঠার সময় প্রথমে কপাল, পরে নাক, এরপর হাতের তালু এবং সর্বশেষ হাঁটু উঠান। (২১) তাশাহুদ পাঠ করার সময় পুরুষেরা বাম পায়ের ওপর বসে ডান পা খাড়া করে রাখা, মহিলারা উভয় পা ডানদিকে বিছায়ে নিতম্বের ওপর বসা।

(২২) তাশাহুদের সময় বসা অবস্থায় উভয় হাঁটুর ওপর দুহাতের তালু বিছায়ে আঙ্গুলসমূহ কিবলামুখী করে একটু ফাঁক করে রাখা।

(২৩) শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দরূদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পাঠ করা। (২৪) সালাম ফিরানোর সময় ডানে ও বামে মুখমণ্ডল ঘোরানো। (২৫) প্রথম সালামের পর দ্বিতীয় সালামে তুলনামূলক তাড়াতাড়ি ও আস্তে বলা। (দূরঃ মুখতার)

নামাযের মুস্তাহাবসমূহ

নামায আদায়ের জন্য যেসব কাজসমূহ আদায় করা মুস্তাহাব তা নিম্নরূপ: যেমন-(১) তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার সময় দুহাত (পুরুষেরা) আস্তিন হতে বের করা। (২) ইকামাতের সময় হাইয়্যা'আলাল ফালাহ বলার সাথে সাথে উঠে নামাযের কাতারসমূহ সোজা করে দাঁড়ান।

(৩) মুয়াযযিন ক্বাদক্বামাতিচ্ছালাহ বলার সাথে সাথে ইমাম সাহেব তাকবীরে তাহরীমা বাঁধা। (৪) সোজা হয়ে দাঁড়ানো। (৫) পদদ্বয়ের মাঝখানে (পুরুষেরা) কমপক্ষে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক করে দাঁড়ান। (৬) তারতীব অনুযায়ী কিরাআত পাঠ করা। (৭) হাঁচি আসলে তা বারণ করার চেষ্টা করা।

(৮) নামাযরত অবস্থায় সিজদাহর স্থানের দিকে, রুকু করার সময় পদদ্বয়ের মাঝখানে, সিজদাহর সময় নাকের দিকে এবং তাশাহুদের সময় দুজানুর দিকে নজর রাখা। (৯) রুকু ও সিজদাহ্ দেয়ার সময় বেজোড় সংখ্যায় তাসবীহ পাঠ করা।

(১০) তারতীব বা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সূরা কিরাআত পাঠ করা। (১১) প্রথম রাকা'আতে একটু বড় সূরা এবং দ্বিতীয় রাকা'আতে তুলনামূলক একটু ছোট সূরা পাঠ করা। (১২) যোহরের নামায শীতকালে একটু প্রথম ওয়াক্তে, আর গ্রীষ্মকালে একটু দেরি করে পাঠ করা উত্তম।

(১৩) ফজরের নামাযের প্রথম রাকা'আতে ত্রিশ আয়াত, দ্বিতীয় রাক'আতে বিশ আয়াত পরিমাণ এবং যোহর ও আছরের নামাযে ত্রিশ আয়াত বা বিশ আয়াত পরিমাণ পাঠ করা। মাগরিবের নামাযে ছোট সূরা এবং এশার নামাযে বিশ আয়াত পরিমাণ পাঠ করা। (১৪) নামাযের নিয়্যত মুখে উচ্চারণ করা। (১৫) সালাম ফিরানোর সময় দু'কাঁধের দিকে দৃষ্টি রাখা।

Post a Comment

0 Comments