ফিতরার বিবরণ, ফিতরা দেয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত, ই'তেকাফের বিবরণ

ফিতরার বিবরণ, ফিতরা দেয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত, ই'তেকাফের বিবরণ

ফিতরার ফজিলত, যাদের উপর ফিতরা দেয়া ওয়াজিব, ফিতরা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি, ই'তেকাফের বিবরণ, ই'তেকাফের শর্তসমূহ।, ই'তেকাফ ভঙ্গের কারণসমূহ, ই'তেকাফের ফজীলত, ফিতরা দেয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত, ফিতরার ফজিলত, ফিতরা দেওয়ার নিয়ম, সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের গুরুত্ব, ফিতরা কার উপর ওয়াজিব মাসিক আল কাউসার, সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ,

ফিতরার বিবরণ

রমযানের রোযার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণের জন্য ঈদের দিন নামাযের পূর্বে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দান করাকে ছদকায়ে ফিতর বলে। যে সমস্ত লোকের উপর কোরবানী ওয়াযিব, তাহাদের উপর নিজের এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের তরফ হইতে "ফিৎরা" আদায় করিতে হইবে। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেকের পূর্বেও যদি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তাহার তরফ হইতেও ফিতরা আদায় করিতে হইবে।

নিজ স্ত্রীর পক্ষ হইতে স্বামী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পক্ষ হইতে পিতার ফিতরা আদায় করিতে হইবে। রোযা রাখুক বা না রাখুক উভয় অবস্থাতেই সদকায়ে ফিতর আদায় করিতে হইবে। ফিতরা ঈদের ময়দানে যাওয়ার পূর্বেই আদায় করা মোস্তাহাব। পরে আদায় করিলেও আদায় হইয়া যাইবে। যাহারা যাকাত গ্রহণ করিতে পারে তাহারা ফিতরাও গ্রহণ করিতে পারিবে। একজনের ফিতরা কয়েকজনকে বা কয়েকজনের ফিতরা একজনকেও দেওয়া যাইতে পারে, তবে একজনকে দেওয়াই ভাল।

যাদের উপর ফিতরা দেয়া ওয়াজিব

আমরা পবিত্র রমযান মাসের রোযা পালন করি বটে, কিন্তু উহার যথাযোগ্য মর্যাদা ঠিক মত আদায় হয় না। বহু ভুল-ত্রুটি হইবার আশঙ্কা থাকে, তাহাতে আমাদের রোযা একেবারেই নিষ্কন্টক হয় না।

অতএব রোযাদারের রোযাকে ত্রুটি-বিচ্যুতি হইতে পবিত্র করার জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ইসলাম ধর্ম ধনীদের জন্য 'ফিতরা' আদায় করা ওয়াজিব করিয়া দিয়াছে। এই ফিতরার হকদার মিসকীনরা। এই ফিতরার দ্বারা গরীব-মিসকীনরা উপকৃত হয় এবং ধনীদের সঙ্গে ঈদের দিনে উহারা আনন্দ উৎসব পালন করে।

যাহাদের উপর যাকাত দেওয়া ওয়াজিব, তাহাদের উপর ফিতরা দেওয়াও ওয়াজিব। তবে ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য জাকাতের মত নেছাব পরিমাণ মালের উপর এক বৎসর মওজুদ থাকা শর্ত নয়। কেবলমাত্র ঈদের দিন সকালে নেছাব পরিমাণ মালের মালিক থাকিলে তাহাকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নেছাবের পরিমাণ হইল ৬ ভরি ১১ মাশা ৪ রতি ২ যব অর্থাৎ দুইশত দেরহাম পরিমাণ।

একজনের ফিতরা একজন মিসকীনকে পুরা দেওয়া উচিত। তবে একাধিক মিসকীনের ভিতরে একজনের ফিতরা ভাগ করিয়াও দিতে পারে। তদ্রূপ কয়েকজনের ফিতরা একজন মিসকীনকে দেওয়া দুরস্ত আছে। (রাঃ মোঃ) যাহারা যাকাত পাইতে পারে, ফিতরাও তাহারা (ফঃ হিঃ) খাইতে পারিবে অর্থাৎ যাহাকে যাকাত দেওয়া যায়, তাহাকে ফিতরাও দেওয়া যায়।

ফিতরা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি

স্বল্প সামর্থবান দরিদ্রগণ। এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হইবে ঐসব লোক যাহাদের নিকট যাকাত ফরজ হইবার ন্যূনতম পরিমাণ অর্থাৎ "নিসাব” এর চেয়ে কম সম্পদ রহিয়াছে। এই স্বল্প পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিগণের জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়েজ আছে।

তবে এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও এই ব্যক্তির জন্য কাহারো নিকট হাত পাতা তথা ভিক্ষা বৃত্তি করা জায়েজ নাই। ঠিক তদ্রুপ কোন ব্যক্তির "নিসাব” পরিমাণ সম্পদ রহিয়াছে। কিন্তু এই সম্পদের উৎপাদন শক্তি নাই এবং এই ব্যক্তিও বিভিন্ন আর্থিক অভাবে জর্জরিত, এম তাবস্থায় এই ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা শরীয়ত সম্মত হইবে।

সহায় সম্বলহীন দারিদ্রগণ। এইখানে ঐসব লোকদিগকে বুঝানো হইয়াছে যাহাদের কোন সম্পদ নাই। ইহাদের মধ্যে যাহারা শারীরিক দিক দিয়া উপার্জন করিতে অক্ষম এবং তাহাদের নিকট মাত্র একদিনের অন্নের ব্যবস্থাও নাই। এই পরিস্থিতিতে ইহারা শুধু ওই দিনটির আহারের জন্য লোকের কাছে হাতও পাতিতে পারে।

শরীয়ত সম্মত ক্রীতদাস। এই শ্রেণীতে শুদু মুক্তির আদেশপ্রাপ্ত ক্রীতদাস অন্তর্ভুক্ত হইবে। তাহাছাড়া যাকাতের দ্বারা সাধারণ দাস-দাসীকে ক্রয় করিয়া মুক্ত করিলে যাকাত আদায় হইবে না।

কেননা, যাকাতের অর্থ যাকাতগ্রহীতার মালিকানায় দিয়া দিতে হয়। কিন্তু এইখানে হচ্ছে না। সাধারণ দাস মুক্তির জন্য যাকাত ব্যতীত অর্থ ব্যবহার করিয়া এই মঙ্গলজনক কাজে শরীক হইতে হইবে।

ই'তেকাফের বিবরণ

রমজানের বিশ তারিখ সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পূর্ব হতে উনত্রিশ বা ত্রিশ তারিখ অর্থাৎ যেদিন ঈদের চাঁদ দেখা যাবে সেদিনকার সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুরুষদের জন্য মসজিদে এবং মহিলাদের জন্য নিজ ঘরের নির্দিষ্ট নামায পড়ার স্থানে সকল দুনিয়াবী কাজকর্ম ও মোহকে ছেড়ে দিয়ে একাগ্রচিত্তে অবস্থান করাকে ইসলামী শরী'আতের পরিভাষায় ই'তেকাফ বলে। রমযানের শেষ দশদিন যথারীতিভাবে ই'তেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া।

যা অবশ্যই করতে হবে, না করলে সকলেই গুনাহগার হবে। অবশ্য মহল্লার দু'একজন সকলের পক্ষ হতে আদায় করলেও তারা দায়মুক্ত হবে। সহীহ হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে- আমাদের নবী (স) সর্বদা রমজানের শেষ দশদিন ই'তেকাফ করতেন।

পবিত্র রমজানের সুন্নাত ই'তেকাফ ছাড়া আরও দু'ধরনের ই'তেকাফ আছে। যেমন- ১। ওয়াজিব ই'তেকাফ অর্থাৎ কোন লোক মান্নত করল, আমার উমুক কাজটি সমাধা হলে আমি ই'তেকাফ করব। তবে এ ধরনের ই'তেকাফের জন্য রোযা রাখা শর্ত। সুতরাং ই'তেকাফ রাতদিন মিলিয়ে করতে হবে। ২। মুস্তাহাব ই'তেকাফ- এটি যে কোন সময়েই করা যায়।

ই'তেকাফের শর্তসমূহ।

ই'তেকাফ করার জন্য নিম্নলিখিত পাঁচটি শর্ত অবশ্যই থাকতে হবে। ১। পুরুষের জন্য এমন মসজিদ হতে হবে যেখানে ৫ ওয়াক্ত জামা'আতের ব্যবস্থা আছে এবং জুমু'আহ আদায় করা হয়। আর মহিলাদের জন্য ঘরের একটি নির্দিষ্ট স্থান হওয়া উচিত।

২। ই'তেকাফের নিয়্যত থাকতে হবে। ৩। জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে। ৪। ই'তেকাফকারী ব্যক্তি পায়খানা-পেশাব, গোসল করার প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোন প্রয়োজনে মসজিদের বাইরে যেতে পারবে না। ৫। খানা-পিনা আনার মত লোক থাকলে নিজে খানার জন্য যেতে পারবে না ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, ই'তেকাফ অবস্থায় চুপচাপ বসে থাকা মাকরূহ। অতএব এ সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, দোয়া-দুরূদ পাঠ করা, কিতাব ও মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করা, নফল নামায, কাযা নামায আদায় ইত্যাদি 'ইবাদাত-বন্দেগীতে রত থাকা ভাল। (আলমগীরী)

ই'তেকাফ ভঙ্গের কারণসমূহ

নিম্নলিখিত চারটি কারণে ই'তেকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়।
১। ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলবশত সহবাস করলে। ২। মহিলাদের হায়েয-নিফাস হলে। ৩। বিনা কারণে মসজিদের বাইরে অবস্থান করলে। ৪। চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি কারণে বীর্যপাত হলে।

উল্লিখিত কারণে ই'তেকাফ ভঙ্গ হলে পুনরায় তা ক্বাযা করতে হবে।

ই'তেকাফের ফজীলত

ই'তেকাফের ফজীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে- "যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশদিন ই'তেকাফ করবে, তাকে দু'টি কবুল হজ্জ এবং দু'টি ওমরার সমতুল্য ছাওয়াব দান করা হবে। অর্থাৎ দু'টি ক্কবুল হজ্জ এবং দু'টি ওমরার সমান ছাওয়াব দান করা হবে। (বায়হাক্কী)

অন্য এক হাদীসে উল্লেখ আছে- "যে ব্যক্তি খালেছ নিয়্যতে এবং খাঁটি ঈমানের সাথে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে ই'তেকাফ করবে তার পূর্ববর্তী (সগীরাহ) গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে।” (দায়লামী)

ই'তেকাফের সর্বনিম্ন সময়সীমা হলো এক দিন এক রাত। হযরত রাসূলে আকরাম (স) ইরশাদ করেন- "যারা কমপক্ষে এক দিন ও এক রাত ই'তেকাফ করবে কিয়ামাতের দিন তাদের ও দোযখের মধ্যকার ব্যবধান তিনটি নদী হবে। আর এসব নদীসমূহের প্রত্যেকটির দূরত্ব হবে পাঁচশ বছরের রাস্তা।"

মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে যাবতীয় নেক 'আমলসমূহ করার তৌফিক দান করুন এবং যাবতীয় খারাপ ও অন্যায় কাজসমূহ হতে বিরত রাখুন।

Post a Comment

0 Comments