নামাযের বর্ণনা, নামাযের ফযীলত ও গুরুত্ব, নামাযের ইতিহাস
নামাযের বর্ণনা:
ইসলামে প্রকাশ্যভাবে শারীরিক 'ইবাদাতসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ হল নামায। এ কারণেই অন্যান্য সকল 'ইবাদাত হতে নামাযের মর্যাদা এবং ফযীলত অনেক বেশি। কারণ নামাযের মাধ্যমেই মানুষ স্বীয় স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ এবং উত্তম সৃষ্ট জীবের মধ্যকার সম্পর্কটি যেভাবে ফুটে উঠে অন্য কোন 'ইবাদাতে তা এভাবে ফুটে উঠেনা।
মহা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ পাক যতবার নামাযের জন্য তাকিদ দিয়েছেন অন্য কোন 'ইবাদাতের জন্য কিন্তু এতবার জোর তাকিদ দেননি। রাসূলে কারীম (সাঃ) জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বারংবারই নামাযের কথা উল্লেখ করে গেছেন।
নামায আদায়ের মধ্যেই বান্দার ইহলৌকিক এবং পরলৌকিক জীবনের অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। মানুষের চরিত্র গঠনে নামাযের কোন জুড়ি নেই। নামায নামাযী ব্যক্তিকে যাবতীয় অন্যায়-অশ্লীল কার্যাবলি হতে বিরত রাখে এবং বাস্তবপক্ষে নামাযের মাধ্যমেই মানুষ সফলতার চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে।
নামাযের ফলে মানুষের ইহকাল এবং পরকালের চরম স্বার্থকতা ও কল্যাণ লাভ হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ্ তা'আলা এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন-“একান্ত আগ্রহের সাথে যে মু'মিন বান্দা নামায আদায় করে নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি সফলতা অর্জন করে থাকে।" pach wakto namaz time.
নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে' পবিত্র হাদীস শরীফেও নবী আকরাম (সাঃ) এর অসংখ্য বাণী উল্লেখ রয়েছে, এখানে মাত্র কয়েকটি উদ্ধৃতি দেয়া হল।
এক হাদীসে আছে, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন- "নামায হল ইসলামের ভিত্তি বা স্তম্ভস্বরূপ। যেলোক যথারীতি নামায আদায় করল সে ধর্মের খুঁটি দৃঢ় রাখল। আর যে নামাযকে ছেড়ে দিল সে ধর্মের খুঁটিকে ভেঙ্গে দিল।"
অন্য এক হাদীসে আছে মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন- "যে ব্যক্তি নামাযের আরকান-আহকাম সহকারে যথারীতি নামায আদায় করবে শেষ বিচারের দিন ঐ নামাযসমূহ তার জন্য জ্যোতির্ময়, দলীল এবং মুক্তির উসিলা হবে। আর যে লোক নামাযের ব্যাপারে গাফেল, অলস বা অমনোযোগী হবে, শেষ বিচারের দিন তার জন্য নামায জ্যোতির্ময়, দলিল এবং মুক্তির কারণ হবে না।
শেষ বিচারের দিন। ঐ সকল লোক কারুণ, হামান, ফেরাউন ইত্যাদি কাফির-মুর্শিকদের সাথে বসবাস করবে।” সুতরাং দেখা গেল, খাঁটি মনে নামায আদায় করলে তাতে কেবল অসীম ছাওয়াবই হবে না; বরং নামাযের দ্বারা সগীরা গুনাহসমূহও ক্ষমা করে দেয়া হবে।
মহানবী (সাঃ) এ মর্মে এক হাদীসে উল্লেখ করেছেন- "যখন কোন মোমিন ব্যক্তি খাঁটি দিলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে, তখন নামাযী ব্যক্তির পাপরাশি মোচন হয়ে যায়।"
অন্য এক হাদীসে মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন- "পাঁচ ওয়াক্ত নামায এক জুমু'আ হতে পরবর্তী জুমু'আ পর্যন্ত, এক রমযান হতে অন্য রমযান পর্যন্ত সময়ের মধ্যকার যাবতীয় (সগীরা) গুনাহসমূহ মোচন করে দেয়। যদি ঐ লোক শির্ক কিংবা কবীরা গুনাহ হতে বিরত থাকে।"
অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন- "যখন কোন মুসলমান ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে নিয়মিতভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, তখন সে নামাযী ব্যক্তির সগীরা গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।"
অন্য এক হাদীসে মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন- "কিয়ামতের দিন বান্দার 'আমলসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেয়া হবে। নামাযের ফলাফল ভালো হলেই সে ব্যক্তি সফলতা লাভ করবে, আর তা না হলে সে সফলতা লাভ করতে পারবে না; বরং এ কারণে সে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।"
নামাযের ফযীলত ও গুরুত্ব
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন স্বীয় বান্দার নিকট কেবলমাত্র আনুগত্যতার স্বীকৃতি চান, আর নামাযের মধ্যেই এ বিষয়টি সঠিকভাবে ফুটে ওঠে।
নামাযের মধ্যে যেরূপ ধারাবাহিক ও পুরাপুরিভাবে মহান প্রভুর তা'রীফ, প্রশংসা, আশ্রয়, করুণা ভিক্ষা ও হিদায়াতের জন্য সাহায্য কামনামূলক যে সকল সূরা-কালাম, দোয়া-দরূদ ইত্যাদি পাঠ করা হয়, এর সবগুলোই মহান আল্লাহর নিকট চরম বিনয় প্রকাশ ও আত্মসমর্পণেরই নামান্তর মাত্র।
মূলত আনুষ্ঠানিকতা ও আন্তরিকতা উভয় মিলেই মানুষকে দৈনন্দিন আল্লাহ্ দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর ঐ নামাযী ব্যক্তিগণই মহান আল্লাহর স্বার্থক বান্দারূপে পরিগণিত হয়।
মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী প্রতিটি মু'মিন ব্যক্তিগণের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কার্যাবলীর মধ্যে সর্বপ্রথম কার্যই হল নামায, সুতরাং ছোট বেলা হতেই এ অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। যাতে বড় হয়েও এ অভ্যাস বাদ পড়ে না যায়।
তাই ছোটবেলা হতেই এ অভ্যাস গঠন করানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসূলে কারীম (সাঃ) পবিত্র হাদীস শরীফে ঘোষণা করেছেন- "তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়স হলে নামাযের জন্য নির্দেশ দান করে অভ্যাস করাও এবং দশ বছর বয়সে মারধর করে হলেও নামায পড়াবে।
ফলে বড় হওয়ার পরও তাদের এ অভ্যাস ঠিক থাকবে এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্তই তারা নামায আদায়ে যত্নবান হবে।"
অন্য এক হাদীসে মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- "যে ব্যক্তি ইসলামী বিধান অনুযায়ী পবিত্রতা অর্জন করে যথানিয়মে নামায আদায় করে, তার জন্য মহান আল্লাহ্ তা'আলা নয়টি পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে দুনিয়াতে তিনটি, কবরের মধ্যে তিনটি আর হাশরের মাঠে তিনটি।" নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হল।
দুনিয়ায় তিনটি পুরস্কার: ১। দুনিয়াতে দীর্ঘায়ু লাভ করবে। ২। মহান আল্লাহ্ তার নিজের এবং তার পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণকারী হবেন। ৩। মৃত্যুকালে সে ব্যক্তি সকল প্রকার ভয়ভীতি হতে মুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
কবরে তিনটি পুরস্কার: ১। তাকে বেহেস্তের সু-সংবাদ দেয়া হবে। ২। কবরের মধ্যে মুনকার-নাকীরের প্রশ্নোত্তর দেয়া সহজ হবে। ৩.। তার কবরটিকে প্রশস্ত করে দেয়া হবে ও বেহেস্তের সাথে কবরের সংযোগ স্থাপন করে দেয়া হবে।
হাশরের মাঠে তিনটি পুরস্কার: ১। হাশরের মাঠে তার মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। ২। ডান হাতে 'আমলনামা দেয়া হবে। ৩। হিসাব-নিকাশসমূহ সহজ করা হবে এবং তার উপর মহান আল্লাহ্ তা'আলা রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সূচনা
নামাযের ইতিহাস
হাদীসে বর্ণিত আছে যে, মহান আল্লাহ তা'আলার আহ্বানে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র মিরাজ গমন করলে সেখান হতে ফেরার পথে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বীয় উম্মতের জন্য ৫০ ওয়াক্ত নামায ফরয করে দিয়েছিলেন।
পথিমধ্যে হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে আলোচনা হলে মূসা (আঃ) উম্মতে মুহাম্মদীর দুর্বলতার ওজর দেখিয়ে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে মহান আল্লাহর নিকট হতে নামাযের ওয়াক্ত কমিয়ে আনার জন্য পরামর্শ দেন। নবী আকরাম (সাঃ) সে পরামর্শ অনুযায়ী মহান আল্লাহর নিকট হতে পর্যায়ক্রমে সুপারিশের মাধ্যমে পঞ্চাশ ওয়াক্তের স্থলে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করালেন।
এ আলোচনা হতে প্রতীয়মান হল যে, পবিত্র মি'রাজের রাতেই উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাক্রমে-১। ফজর, ২। যোহর, ৩। আছর, ৪। মাগরিব ও ৫। এশা।


0 Comments