পাক-নাপাকের মাসআলা, নাপাক কয় প্রকার ও কি কি, পাক-নাপাকের কয়েকটি মাসআলা

পাক-নাপাকের মাসআলা, নাপাক কয় প্রকার ও কি কি, পাক-নাপাকের কয়েকটি মাসআলা


পাক-নাপাকের মাসআলা, পাক-নাপাকের কয়েকটি মাসয়ালা, কোন কোন জিনিস নাপাক?, কাপড় বা শরীরে কতটা প্রস্রাব লাগলে নাপাক হয়?, নাপাক শব্দের অর্থ কি?, কোন কোন কাজ করলে একজন মানুষ অপবিত্র হয়?, শরীর নাপাক হওয়ার কারণ, নাপাক কাপড় পড়লে কি শরীর নাপাক হয়, পাক নাপাক আল কাউসার, কতটুকু নাপাক মাফ, পেশাব ধোয়ার পানি কি নাপাক, নাপাক কয় প্রকার ও কি কি, ইঁদুরের পায়খানা কি নাপাক, নাপাকি নিয়ে ওয়াসওয়াসা, পাক-নাপাকের মাসআলা, শরীর নাপাক হওয়ার কারণ, নাপাক কাপড় পড়লে কি শরীর নাপাক হয়,

পাক-নাপাকের কয়েকটি মাসআলা

শরীর ও জামা-কাপড়ের নাপাকী দূর করতে হলে এমনভাবে ধুতে হবে যাতে নাজাসাতের দাগ উঠে যায়। প্রথম ধোয়ার পর যদি নাজাসাতের দাগ উঠে যায় তবে পরে আরও দু'বার দ্বিতীয় ধোয়ার পর নাজাসাতের দাগ উঠে গেলে পরে 'আর মাত্র একবার, এরূপভাবে তিনবার ধৌত করা অতি উত্তম।

কোনরূপ তরল নাজাসাত কাপড়-চোপড়ে লাগলে তা পাক করার জন্য তিনবার ধৌত করতে হবে এবং প্রত্যেক বারই উত্তমরূপে কাপড়কে নিংড়াতে হবে যাতে কাপড়ে পানি না থাকে, পানি থাকা পর্যন্ত কাপড় পাক হবে না।

চৌকি, খাট, চাটাই, থালা-বাসন ইত্যাদি বস্তুসমূহ যা কাপড়ের ন্যায় নিংড়ানো যায়না সেগুলোতে নাপাকী লাগলে সেগুলো পাক করতে হলে একবার ধৌত করে কিছু সময় এরূপভাবে লটকিয়ে রাখবে যাতে পানি একেবারে ঝরে পড়ে যায়।

পানি ঝরা বন্ধ হলে দ্বিতীয়বার ধৌত করে পুনরায় ঐরূপভাবে রেখে দিবে। এরপর পুনরায় ধৌত করে ঐরূপভাবে রেখে দিবে। এভাবে তিনবার ধৌত করার পর পানি ঝরা বন্ধ হলেই তা পাক বলে গণ্য হবে।

মশা-মাছি এবং ছারপোকার রক্ত নাপাক নয়। ঐ সবগুলোর রক্ত শরীরে বা কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হবে না।
কোন তৈলে নাজাসাত পড়ে থাকলে সে তৈল হাতের তালু বিস্তার অপেক্ষা কম পরিমাণ কোন কাপড়ে লেগে থাকলে তা নিয়ে নামায পড়া জায়েয হবে।

কিন্তু তৈল ঐ পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে এবং বেশি স্থানে ছড়িয়ে পড়লে ঐ তৈলযুক্ত শরীর বা কাপড় দিয়ে নামায আদায় করা জায়েয হবে না, বরং ঐ কাপড়টি ধৌত করা ওয়াজিব হবে। ছুরি-চাকু, দা-বটি, আয়না, সোনা-রূপার অলংকার ইত্যাদি বস্তুসমূহে নাপাকী লেগে থাকলে সেগুলো ভালভাবে মুছে ফেললে কিংবা মাটি দ্বারা মেজে নিলে পাক হবে।

কিন্তু কারুকার্যখচিত অলংকার কিংবা আসবাবপত্রে নাপাকী লেগে থাকলে তা ভালভাবে ঘসে-মেজে ধৌত না করা পর্যন্ত পাক হবে না।

নাপাক বিছানায় শোয়ার পর নিজের শরীরের ঘামে যদি কাপড় ভিজে যায় তবে শরীর কিংবা কাপড় কোনটাই নাপাক হবে না। কিন্তু শরীরের ঘামে নাপাক বিছানা ভিজে তার নাপাকী শরীরে কিংবা কাপড়ে লাগলে তা নাপাক হয়ে যাবে।

কুয়া ও ইন্দিরার পানির বিবরণ

কোন কুয়া বা ইন্দিরায় যদি নাপাকী বস্তু পড়ে থাকে, তাহলে উক্ত পানি নাপাক হয়ে যাবে। কুয়ার ভেতর কোনরূপ জীব-জন্তু পড়ে গিয়ে মরে ফুলে, পঁচে-গলে গেলে প্রথমে কুয়া হতে ঐ মরা জন্তুটিকে উঠানোর পর কুয়ার সমস্ত পানিই উঠিয়ে ফেলে দিতে হবে।

শূকর, শিয়াল, কুকুর ইত্যাদি ধরনের কোন প্রাণী কুয়াতে পড়ে গেলে ঐ সমস্ত প্রাণী জীবিত অবস্থায়ও যদি কুয়া হতে উঠান হয়, তাহলেও কুয়ার সমস্ত পানি ফেলে দিতে হবে। কুয়ার পানিতে কোন প্রাণী যখনই পড়েছে তখন হতেই কুয়ার পানি নাপাক হয়ে যাবে।

কখন পড়েছে এ সময় জানা না থাকলে এবং মৃত জানোয়ারটি ফুলে না গেলে একদিন একরাত, আর যদি ফুলে যায় তাহলে তিনদিন তিনরাত পূর্ব হতেই পানি নাপাক হয়েছে বলে মনে করতে হবে।

একদিন একরাতের অবস্থায় ঐ পরিমাণ সময়ের এবং তিনদিন তিনরাতের অবস্থায় যদি ঐ নাপাক পানি দ্বারা অযু-গোসল করে থাকে ঐ পরিমাণ সময়ের প্রতি ওয়াক্ত নামাযের কাযা আদায় করতে হবে। আর যদি কাপড়-চোপড় ধুয়ে থাকে তাহলে সেগুলোও পুনরায় ধৌত করতে হবে।

যদি কুয়ার পানি ফেলে দেয়া সম্ভব না হয়, অর্থাৎ যতই উঠায় ততই ভরে যায়, এমতাবস্থায় অনুমান করতে হবে যে, জানোয়ারটি কূপে পড়ার সময় কতটুকু পানি। ছিল? ততটুকু আন্দাজ পানি ফেলে দিতে হবে। আর যদি অনুমান করা না যায় তাহলে দু'তিনশত বালতি পানি ফেলে দিতে হবে। আর ঐ বালতিটি এমন হতে হবে যেন তাতে ৪/৫ লিটার পানি ধরে।

বিড়াল, মুরগী, কবুতর ইত্যাদি জাতীয় ছোট কোন প্রাণী পড়লে যদি ফুলে না উঠে তাহলে ৪০ হতে ৬০ বালতি পানি ফেলে দিতে হবে। আর যদি ইঁদুর, চড়ুই ইত্যাদি ছোট প্রাণী কুপের ভেতর পড়ে ফুলে না উঠে তা হলে ২০/৩০ বালতি পানি ফেলে দিলেই বাকী পানি পাক হয়ে যাবে।

পাক-নাপাক পানির বিবরণ

সকল প্রকার নাজাসাত হতে পবিত্রতা অর্জনের উপাদান হল পানি, সুতরাং অবশ্যই ঐ পানি পাক হতে হবে। যেহেতু নাপাক পানি দ্বারা কোন জিনিস ধৌত করলে তা পাক তো হবেই না, বরং নাপাক পানি মিশ্রিত হবার ফলে নাপাকীর পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। সেহেতু কোন পানি পাক আর কোন পানি নাপাক তা ভালোভাবেই জানা দরকার।

নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-দীঘি ও ঝর্নার পানি পাক, বৃষ্টির পানিও পাক। কিন্তু এসব পানিসমূহ নাপাক স্থানে জমা হলে সে পানি পাক হবে না।

কোন ছোট পুকুর বা কুয়ার পানিতে কোনরূপ নাপাক বস্তু পড়ে পানির রং, স্বাদ, গন্ধ ঠিক না থাকলে ঐ পানি নাপাক হয়ে যাবে। বড় গর্ত বা হাউজের পানি পাক। কিন্তু হাউজটির ক্ষেত্রফল একশত বর্গহাত হতে হবে।

অর্থাৎ ১০ হাত দৈর্ঘ্য, ১০ হাত প্রস্থ এবং গভীরতাও কমপক্ষে ঐ পরিমাণ হতে হবে, যাতে দু'হাত ঢুকায়ে দিয়ে পানি উঠালেও নিচের কাদা উঠে পানি ঘোলা না হয়ে যায়। স্রোতের পানি পাক। কিন্তু শহরের নর্দমার স্রোতের পানি পাক নয়। যেহেতু এসব নর্দমার পানির সাথে ময়লা-আবর্জনা থাকে।

খাল-বিল, পুকুর ইত্যাদির পানিতে যদি কোন তরল নাজাসাত পড়ে মিশে যায় তবে ঐ পানি ব্যবহার করা জায়েয হবে। মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি যেসব জীব পানিতে বাস করে সেসব প্রাণী পানিতে মরে থাকলে পানি নাপাক হয় না, তবে ঐ পানি পান করা মাকরূহ

যে পানি দ্বারা একবার কোন জিনিস পবিত্র করা হয়েছে ঐ পানি দ্বারা অযু-গোসল করা জায়েয হবে না। ঐ পানি পান করা বা রান্নার কাজে ব্যবহার করা মাকরূহ। সাবান, জা'ফরান বা অন্য কোন বস্তু পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে পানির স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন করল কিন্তু তরলতা নষ্ট করল না এরূপ পানি ব্যবহার করা জায়েয আছে।

ঝুটা পানি ও ঘামের পাক-নাপাকীর বিবরণ

কোন কিছু খাবার পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে ঝুটা বা উচ্ছিষ্ট বলে। এক্ষেত্রে মানুষের ঝুটা পাক, চাই সে পুরুষ হউক বা মহিলা হউক। হায়েয- নিফাসওয়ালী মহিলার ঝুটাও পাক। কারও হাতে কিংবা মুখে কোনরূপ নাপাক বস্তু লাগা থাকা অবস্থায় তার ঝুটা বা উচ্ছিষ্ট দ্রব্য নাপাক হয়ে যাবে।

যথা-কোন মদ বা শরাবখোর ব্যক্তির মুখে মদ বা শরাবের দুর্গন্ধ থাকা অবস্থায় কোন কিছু ঝুটা করা। বিড়ালের ঝুটা নাপাক নয়, তবে মাকরূহে তানজীহি।

বিড়ালের ঝুটা পানি দ্বারা অযু করা জায়েয আছে। তবে অন্য পানির ব্যবস্থা থাকলে সে ঝুটা পানি দ্বারা অযু করবে না। আর যদি অন্য কোন পানি না থাকে তাহলে ঐ পানি দ্বারা অযু করা যাবে। কোনরূপ খাবারে যদি বিড়াল মুখ লাগায়ে থাকে তাহলে ঐ খাবার খাওয়া জায়েয আছে, তবে উক্ত উচ্ছিষ্ট খাওয়া মাকরূহে - তানজীহি।

কুকুর কোন থালা-বাসন বা পাত্র ইত্যাদিতে মুখ দিলে তা নাপাক হয়ে যাবে। কারণ কুকুরের মুখের লালা নাপাক। এরূপ থালা-বাসন বা পাত্রসমূহ পাক করতে হলে অবশ্যই সাতবার ধৌত করতে হবে। চিড়া, মুড়ি, চাল, আটা-ময়দা, ইত্যাদি বস্তুসমূহে কুকুর মুখ দিলে যে অংশে কুকুর মুখ দিয়েছে এবং লালা লেগেছে কেবল সে জায়গার চিড়া, মুড়ি, চাউল, আটা-ময়দা ইত্যাদি ফেলে দিলে বাকীগুলো পাক হয়ে যাবে।

যে সকল পশুর গোস্ত খাওয়া হালাল, যথা-গরু-ছাগল, হাস-মুরগি, ভেঁড়া, দুম্বা, উট, মহিষ ইত্যাদি হালাল পশুর ঝুটাও পাক। কিন্তু যদি তাদের মুখে কোনরূপ নাজাসাত লেগে থাকে এবং ঐ অবস্থায় কোন জিনিসে মুখ দিলে ঐ জিনিস নাপাক হবে।

যে সকল গরু ময়লা-আবর্জনা খায়, কোন কিছু ঝুটা করার সময় তার মুখে ময়লা না লেগে থাকলেও তার ঝুটা মাকরূহ। যেসব হাঁস-মুরগি ময়লা-আবর্জনাময় স্থানে চরে বেড়ায় এবং নাজাসাত খায়, তাদের ঝুটা মাকরূহ। আর যদি ঐসব পাখিসমূহ বাঁধা অবস্থায় থাকে তাহলে তাদের ঝুটা পাক।

যে সকল পাখির গোস্ত খাওয়া হালাল। যেমন: বক, ঘুঘু, কবুতর ইত্যাদি পাখির ঝুটাও পাক। বাজ, শিকরা ইত্যাদি শিকারি পাখির ঝুটা মাকরূহ। তবে ঐগুলো পোষা হলে এবং কোনরূপ মরা প্রাণীর গোস্ত, নাড়ি-ভুড়ি ইত্যাদি আবর্জনা খাওয়ার সুযোগ না পায় তাহলে তাদের ঝুটা পাক। যেসব প্রাণী, পশু-পাখির ঝুটা নাপাক তার ঘামও নাপাক। আর যে, সব প্রাণী, পশু-পাখির ঝুটা পাক তাদের ঘামও পাক। যার ঝুটা মাশকুক তার ঘামও মাশকুক।

ইস্তেঞ্জার বিবরণ

পেশাব-পায়খানা করার পর ঢিলা-কুলুখ কিংবা পানির সাহায্যে নাপাকী দূর করে পবিত্রতা অর্জন করার নামই ইস্তেঞ্জা। মোট কথা পেশাব-পায়খানা হতে পাক পরিষ্কার হবার জন্য যে সমস্ত বিধি-বিধান রয়েছে সে অনুযায়ী পাক-পরিষ্কার হওয়াকেই ইস্তেঞ্জা বলে।

মানুষ মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাদের অন্য বিশেষ উপাধি হল আশরাফুল মাখলুকাত। তাই মানুষের অন্যান্য বিষয়াবলীর ন্যায় পেশাব-পায়খানারও কতিপয় বিধি-বিধান মেনে চলতে হয়। কারণ অন্যান্য প্রাণীদের মত মানুষের যেখানে সেখানে পেশাব-পায়খানা করা অনুচিত।

এজন্য ইসলামী শরী'য়তে কিছু নিয়ম-নীতি দেয়া আছে, যাতে মানুষ ঐ নিয়ম কানুন অনুযায়ী চলার মাধ্যমে সামাজিকতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে নিম্নে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হল। যাতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী এ বিষয়াবলীসমূহ যথারীতি পালনের মাধ্যমে সুসভ্য জাতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

❂ জীব-জানোয়ারের মত কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব-পায়খানা করবে না।
নির্দিষ্ট কোন পেশাব-পায়খানায় মল-মূত্র ত্যাগ করবে।
❂  পূর্ব কিংবা পশ্চিম অর্থাৎ কা'বার দিকে মুখ বা পিঠ দিয়ে পেশাব-পায়খানা করবে না। কিন্তু মক্কার উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্বে যারা আছে তাদের একই হুকুম। এককথায় কিবলামুখী হয়ে কিংবা কিবলাকে পেছনে রেখে মল-মূত্র ত্যাগ করতে বসবে না।

❂ পেশাব-পায়খানায় রত অবস্থায় কোনরূপ কথা-বার্তা, আলাপ-আলোচনা করবে না।
❂ উক্ত অবস্থায় দোয়া-দরূদ কিংবা কোরআনের কোন আয়াত পড়বে না।
❂ পেশাব-পায়খানার পর ঢিলা নিয়ে হাঁটার সময় মেসওয়াক করবে না, কিংবা কোনরূপ কথাবার্তা বলবে না।

❂ রাস্তা-ঘাট কিংবা লোক চলাচলের জায়গা এবং কোন ছায়াদার কিংবা ফল-মূলের গাছের নিচে পেশাব-পায়খানা করবে না।

❂ পেশাব-পায়খানার করার সময় কোন খানা-খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা হারাম।
❂ পেশাব-পায়খানার সময় কোরআন-হাদীসের অংশবিশেষ লিখিত কোন কাগজ-পত্র কিংবা টুপি-কাপড় ব্যবহার করা যাবে না।

❂ পেশাব-পায়খানার সময় পরিধেয় কাপড়-চোপড়ের প্রতি লক্ষ্য রাখবে যেন তা পরিধেয় বস্ত্রে না লাগে।
❂ পেশাব-পায়খানার সময় কোন অবস্থাতেই লজ্জাস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করবে না। তবে বিশেষ কোন প্রয়োজন হলে সেটি অন্য কথা।
❂ পেশাব-পায়খানাতে ঢুকতে প্রথমে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করার সময় নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে-

بِسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নী আ'উযুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবাইছি।

অর্থ: আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি হে আল্লাহ্! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

❂ পেশাব-পায়খানা হতে বের হবার সময় ডান পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে পড়বে-

غُفْرَانَكَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي اذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى وَعَافَانِي .

উচ্চারণ: গুফরানাকা আল হামদু লিল্লাহিল্লাযী আযহাবা 'আন্নিল আযা ওয়া 'আফানী।

অর্থঃ হে আল্লাহ্! আপনার নিকট আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ঐ প্রভুরই জন্য সকল প্রকার প্রশংসা যিনি আমার ভেতরকার কষ্টদায়ক বস্তুসমূহ বের করে দিলেন এবং আমাকে শান্তি ও আরাম দান করলেন।

ঢিলা-কুলুখের বিবরণ

প্রাথমিক আলোচনা: মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন পাকে ঘোষণা করেন যে-"এমন কতিপয় লোক তাদের মধ্যে রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে যারা সর্বদা ভালোবাসেন, আর মহান আল্লাহ্ তা'আলাও পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।"

সুতরাং মহান আল্লাহ্ তা'আলার ভালোবাসা লাভ করতে হলে এবং পাক-পবিত্র থাকতে হলে যে ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা প্রয়োজন উল্লিখিত আয়াতটিই এর অকাট্য প্রমাণ। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) ঢিলা-কুলুখ সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন।

"হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলে কারীম (সাঃ) একদিন মল-মূত্র ত্যাগের জন্য বের হলেন, আমিও তাঁর সাথে বের হলাম। রাসূলে কারীম (সাঃ) পথ চলাকালীন সময়ে এদিক-সেদিক তাকাতেন না, কাজেই আমি তাঁর অত্যন্ত নিকটবর্তী হলাম।

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখে বললেন, হাড্ডি ও গোবর ছাড়া ইস্তেঞ্জার জন্য কয়েকটি পাথরের টুকরা নিয়ে আস। নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে আমি আমার কাপড়ের কিনারায় করে কয়েকটি পাথরের টুকরা এনে রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট রেখে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালাম।

রাসূলে কারীম (সাঃ) মল-মূত্র ত্যাগের পর ঐ সব পাথরের টুকরাসমূহ ব‍্যবহার করলেন। পবিত্রতা সম্পর্কে অন্য হাদীসে উল্লেখ আছে-"পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।"

উপরোল্লিখিত হাদীসসমূহ পাঠে বুঝা গেল, দৈহিক পবিত্রতা লাভের জন্য পেশাব-পায়খানার পর ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা অবশ্য কর্তব্য।

এ ছাড়াও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নাত বা সুন্নাতে রাসূল। এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার না করলে শরীর এবং কাপড়-চোপড় নাপাক থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ফলে অযু-গোসল শুদ্ধ হয় না।

এ মর্মে পবিত্র হাদীস শরীফে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে- "পেশাব হতে তোমরা সর্বদা বিশেষভাবে বেঁচে থাক। কেননা এ পেশাবের কারণেই কবরে অধিকাংশ শাস্তি হয়ে থাকে।” পুরুষ-মহিলা সকলেরই ঢিলা ব্যবহার করতে হয়। পুরুষের পেশাব-পায়খানা উভয় কাজের বেলায় ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করতে হয়, আর মহিলাদের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র পায়খানার পর ঢিলা ব্যবহার করতে হয়।

ইসলামী শরী'য়তের নির্দেশানুযায়ী পেশাব-পায়খানার পর ঢিলা ব্যবহার করা সুন্নাত, আর পানি ব্যবহার করে ইস্তেঞ্জা করা মুস্তাহাব। তবে এ হুকুম সকল ক্ষেত্রে প্রজোয্য নয়। যথা-

❂ পেশাব-পায়খানা যদি নির্ধারিত স্থান ছাড়া বাইরে বেশি না ছড়ায় তাহলে কেবল ঢিলা ব্যবহার করলেই চলবে, অথবা পানি দ্বারা শৌচ কার্য করলেও চলে আর 'উভয়টি করা মুস্তাহাব।

❂ ঠিক একইভাবে যদি পেশাব-পায়খানা মলদ্বার বা মূত্রনালী হতে বের হয়ে এক দেরহাম (যা আমাদের দেশের সাবেক রূপার এক টাকার সমানকে এক দেরহাম বলে) পরিমাণ স্থান অতিক্রম করে তাহলে ঢিলা ব্যবহার করা সুন্নাত। কিন্তু এ অবস্থায় পানি ব্যবহার করা ওয়াজিব হয়ে যায়, নতুবা পবিত্রতা লাভ করা যাবে না।

❂ একই ভাবে মূত্রনালী ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে এক দেরহাম পরিমাণ স্থান হতে অধিক স্থান অতিক্রম করে, তখন ঢিলা ব্যবহার করা সুন্নাত কিন্তু পানি ব্যবহার করা ফরয হয়ে যায়। কেননা এ অবস্থায় পানি ছাড়া কোন অবস্থাতেই পবিত্রতা লাভকরা সম্ভব নয়।

ঢিলা-কুলুখ ব্যবহারের নিয়ম

বিভিন্ন ফিকাহর কিতাবে উল্লেখ আছে, মাটির চাকা, কাপড়ের টুকরা, পাথর ইত্যাদি দ্রব্যসামগ্রী পেশাব-পায়খানার পর ব্যবহার করাকে ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় কুলুখ বলে এবং এসবগুলো দ্বারা কুলুখ লওয়ার অনুমতি রয়েছে।

কুলুখ ব্যবহার করারও কতগুলো নিয়ম-নীতি আছে। যথা-মহিলাদের জন্য নিয়ম হল, তারা প্রথম কুলুখ সামনের দিক হতে পেছনের দিকে টানবে, আর দ্বিতীয় কুলুখটি পেছনের দিক হতে সামনের দিকে আনবে, আর তৃতীয় কুলুখটি সামনের দিক হতে পেছনের দিকে টানবে।

আর পুরুষদের বেলায় দু'টি নিয়ম, একটি হল শীতকালে পুরুষরা প্রথম কুলুখটি পিছনের দিক হতে সামনের দিকে টানবে, দ্বিতীয়টি সামনের দিক হতে পেছনের দিকে টানবে। তৃতীয়টি আবার পেছনের দিক হতে সামনের দিকে টেনে আনবে।

দ্বিতীয় নিয়মটি হল, গ্রীষ্মকালে প্রথমটি সামনের দিক হতে পেছনের দিকে টানবে। দ্বিতীয়টি পেছনের দিক হতে সামনের দিকে টানবে এবং তৃতীয়টি সামনের দিক হতে পেছনের দিকে টেনে নিবে।

পুরুষদের বেলায় শীত-গ্রীষ্ম এ দু'টি নিয়মের কারণ হল শীতকালে পুরুষের অণ্ডকোষ নিচের দিকে ঝুলে থাকে না, আর গ্রীষ্মকালে অণ্ডকোষ নিচের দিকে ঝুলে থাকে। এ কারণে হাতে বা অন্যদিকে যাতে ময়লা না লাগতে পারে এ সম্ভাবনা হতে মুক্ত থাকার জন্যই এ নিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের বেলায় এরূপ হয় না বলে শীত-গ্রীষ্মে তাদের একই নিয়ম করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মহিলাদের জন্য পেশাবের পর ঢিলা নেয়ার কোন দরকার নেই। কেবলমাত্র পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা করে নিলেই চলবে। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে পেশাবের পর ঢিলা ব্যবহার করা সুন্নত। পেশাবের পর ঢিলা ব্যবহারের নিয়ম হল, পেশাব করার পর ঢিলা হাতে নিয়ে পুরুষাঙ্গের মাথায় পেপে ধরে একটু হাঁটা-হাঁটি করবে, যাতে পুরুষাঙ্গে প্রস্রাবের কোনরূপ সন্দেহ না থাকে।

একটি বিষয়ের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। নাবালেগ ছেলে-মেয়ে কিংবা অন্য কোন লোকালয়ে বেহায়াপনাভাবে হাঁটাহাঁটি করবে না। প্রয়োজনে নিম্নোক্ত নিয়মগুলো পালন করা যেতে পারে।

(ক) পেশাবের পর বাম হাতে ভালোভাবে পুরুষাঙ্গ ঝেড়ে নিতে পারো।

(খ) পুরুষাঙ্গ ভালোভাবে ঝেড়ে নেয়ার পর একটি শুকনা ঢিলা পুরুষাঙ্গের মাথায় ধরবে।

(গ) প্রয়োজনে শালীনতা বজায় রেখে কয়েক কদম ঘুরাফেরা করবে।

(ঘ) এক পায়ের সাথে অন্য পা প্যাঁচ দিয়ে চাপ দিবে।

(ঙ) গলা খাঁকর দিবে। প্রয়োজনে মুত্রাঙ্গকে নাড়াচাড়া করবে।

Post a Comment

0 Comments