ওযু করার নিয়ম, কিভাবে ওযু করবেন, ওযুর বিবরণ, ওযুর গুরুত্ব সম্পর্কে কী জান
ওযুর বিবরণ:
'ইবাদাত করার উদ্দেশ্যে শরী'য়তের বিধান অনুযায়ী পবিত্র পানি দ্বারা হাত, মুখ, পা ধোয়া এবং মাথা মাসেহ করাকে ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় অযু বলে। নামায আদায়, পবিত্র কা'বা ঘর তাওয়াফ, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি 'ইবাদাত-বন্দেগী করার জন্য প্রথমে অযু করে নিতে হয়।
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কোরআন মজীদে ঘোষণা করেন- “হে মোমিনগণ! তোমরা যখন নামাযের জন্য দাঁড়াবে তখন তোমরা নিজেদের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করে নাও আর দু'পায়ের টাখনু (গিরা) পর্যন্ত ধুয়ে নাও।"
আয়াতের মর্মানুযায়ী বুঝা যায়, নামাযের পূর্বে অযু করা ফরয বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। বিনা অযূতে নামায আদায় হবে না বরং এরূপ করলে কাফির হয়ে যাবে।
হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- "বেহেস্তের চাবি হচ্ছে নামায আর নামাযের চাবি হচ্ছে অযু।"
সঠিকভাবে অযু করে নামায আদায়ের সুফল: একদা জনৈক সাহাবী নবী কারীম (সাঃ)-কে বললেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! কিয়ামতের মাঠে অসংখ্য লোকদের মধ্য হতে আপনার উম্মতদেরকে আপনি কিভাবে চিনে নিবেন?”
এ প্রশ্নের উত্তরে নবী কারীম (সাঃ) বললেন, "আমার যে উম্মত নামায আদায়ের জন্য দৈনিক পাঁচবার উত্তমভাবে অযু করবে তাদের সগীরা গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে। আর কঠিন কিয়ামতের মাঠে তাদের মুখমণ্ডল এবং অযূর স্থানসমূহে নূরের আলো প্রদান করা হবে। আর সে আলোর নমুনা দেখেই আমি আমার উম্মতগণকে চিনে নিতে পারব।"
উপরোল্লিখিত আলোচনায় বুঝা যায়, অযূর প্রতি যত্নবান হওয়া বিশেষ দরকার। অযু করার সময় অসাবধানতার পরিণাম সম্পর্কে একটি বাণী হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন- "যে ব্যক্তি অযূ করার সময় দুনিয়াবী কথা বলে মহান আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির চল্লিশ দিনের মকবুল নফল 'ইবাদত কবুল করবেন না।" সুতরাং প্রত্যেকেই অযূর প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে তৌফিক দান করুন।
অযূর মাহাত্ম্য
ওযু করার নিয়ম, আরবি অযু শব্দের আভিধানিক অর্থ হল পরিচ্ছন্নতা ও জ্যোতি। ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ হল এক বিশেষ নিয়মে মাথা মাসেহ করাসহ মুখমণ্ডল ও হাত-পা ধৌত করা, যাতে কিয়ামাতের দিন জ্যোতি নসীব হয়।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক মানুষের পক্ষে প্রতিদিন কয়েকবার শরীরের অগ্রভাগ অর্থাৎ হাত, পা, কান ও মাথার চুলের অগ্রভাগ পানি দ্বারা ধুয়ে বা মুছে ফেলা এবং উত্তমরূপে নাক সাফ করা অবশ্যকরণীয়।
কিন্তু একজন মুসলমান পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে প্রতিবার অযু করলে তার এই স্বাস্থ্য বিধান সহজেই পালিত হয়ে যায় এবং সে প্রতিদিন এভাবে করতে বাধ্য। কেননা মহান করুণার আধার আল্লাহ্ জাল্লাহ শানুহু মহা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيكُمْ إلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ .
উচ্চারণ: ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানু ইযা কুমতুম ইলাহ্ ছালাতি ফাগছিলু উজুহাকুম ওয়া আইদিয়াকুম ইলাল মারাফিক্বি ওয়ামছাহু বিরূউ-ছিকুম ওয়া আরজুলাকুম ইলাল কা'বাইন।
অর্থঃ হে মু'মিনগণ! যখন তোমরা নামাযে দাঁড়াবার ইচ্ছা পোষণ করবে তখন নিজেদের মুখমণ্ডল ও উভয় হস্ত কনুই পর্যন্ত ধৌত করে নেবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে। গোড়ালী সমেত পদযুগল ধৌত করে নেবে।
অযুর মধ্যে কয়েকটি সুন্নাত ও কয়েকটি মুস্তাহাব আছে। নিম্নে সেগুলোর বিবরণ দেয়া হল।
অযূর প্রকারভেদ
ওযু করার নিয়ম, অযু সাধারণত তিন প্রকার। যথা: (১) ফরয অযু, (২) ওয়াজিব অয, (৩) মুস্তাহাব অযূ। নিম্নে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল।
ফরয অযু: নামাযের জন্য এবং জানাযা ও সিজদাহ তেলাওয়াতের জন্য অযু করা।
ওয়াজিব অযু: বাইতুল্লাহ শরীফের তাওয়াফের জন্য অযু করা।
মুস্তাহাব অযুঃ (১) নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে (২) নাপাক অবস্থায় পানাহারের ইচ্ছা করলে। (৩) মৃতকে গোসল দেয়ার জন্য। (৪) এক ওয়াক্তের নামায পড়ার পর দ্বিতীয় ওয়াক্তের নামায পড়ার জন্য (অযূ থাকলেও) অযু করা। (৫) নিদ্রা হতে জাগ্রত হওয়ার পর। (৬) মিথ্যা কথা বলার পর। (৭) কারো গীবত করার পর। (৮) ফরয গোসল সমাধা করার পর। (৯) নাপাক অবস্থায় ঘুমাবার ইচ্ছা পোষণ করলে। (১০) নাপাক অবস্থায় পুনরায় স্ত্রীসহবাসের ইচ্ছা করল। (১১) অশ্লীল কবিতা আবৃত্তি করার পর। (১২) হাসি-তামাশা করার পর।
অযূর নিয়ম
পবিত্র হওয়ার উত্তম মাধ্যম হল অযু করা। প্রত্যেক কাজ-কর্মেরই নিয়ম-পদ্ধতি রয়েছে। তেমনি অযু করার সুন্নাত পদ্ধতি হল অযু করার জন্য কিবলার দিকে মুখ করে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে বসবে এবং নিম্নবর্ণিত দু'আটি মনোযোগ সহকারে পড়বে।
بسْمِ اللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى دِيْنِ الْإِسْلَامِ الْإِسْلامُ حَقَّ وَالْكُفْرُ بَاطِلُ الإِسْلامُ نُورٌ وَالْكُفْرِ ظُلْمَةٌ .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল 'আলিয়্যিল 'আযীম। আল হামদু লিল্লাহি আলা দ্বীনিল ইসলাম। আল ইসলামু হাক্বকুন ওয়াল কুফরু বাত্বিলুন, আল ইসলামু নূরুন ওয়াল কুফরু যুলমাতুন।
অর্থ: দয়াময় আল্লাহ্ তা'আলার নামে শুরু করছি। দ্বীন ইসলামের দরুন মহান করুণার আধার আল্লাহ্ জাল্লাহ শানুহুই সমস্ত প্রশংসার উপযুক্ত। ইসলাম সত্য আর কুফরি মিথ্যা। ইসলাম জ্যোতির্ময় আর কুফরি অন্ধকারময়।
অযু করার সঠিক প্রণালী
ওযু করার নিয়ম, এভাবে নিয়্যত করার পর সর্বপ্রথম উভয় হাত কব্জা পর্যন্ত তিনবার ধৌত করবে। এরপর হাতের অঙ্গুলি দ্বারা দন্তপাটীদ্বয় পরিষ্কার করে নেবে। তবে একথা অবশ্যই স্মরণ রাখবে, রোযাদার হলে গড়গড়া কুলি করবে না, নতুবা গড়গড়া সহকারে কুলি করে নেবে।
তারপরে তিনবার করে নাকে পানি দেবে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির সাহায্যে নাক সাফ করবে, কিন্তু রোযাদার ব্যক্তি নাকের মধ্যে যে পর্যন্ত নরম গোস্ত আছে তার ওপরের দিকে কিছুতেই পানি যেতে দেবে না। এরপর সমস্ত মুখমণ্ডল তিনবার করে ধৌত করবে এবং এক হাতের অঙ্গুলি দ্বারা অপর হাতের অঙ্গুলি খিলাল করে নেবে।
আর যদি অঙ্গুলিতে কোন আংটি থাকে তাহলে তা ঘুরিয়ে তার নিচে পানি প্রবেশ করাবে। তারপর সম্পূর্ণ মাথা একবার মাসেহ করবে এবং কানের ভিতরে প্যাঁচসমূহ শাহাদাত অঙ্গুলি দ্বারা আর বহির্ভাগ বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মাসেহ করে নেবে। এর পরে অঙ্গুলি সমূহের পিঠের দিক দ্বারা সুন্দরভাবে ঘাড় মাসেহ করবে, কিন্তু গলা মাসেহ করবে না।
তবে কান ও ঘাড় মাসেহ করার জন্য নতুন করে হাত ভেজানোর দরকার নেই। তারপর উভয় পা টাখনুসহ তিনবার করে ধৌত করবে এবং উভয় হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা উভয় পায়ের অঙ্গুলিসমূহ খিলাল করবে।
অযুর ফরযসমূহ
অযূর মধ্যে ৪টি কাজ ফরয। যথা- ১। সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা। কপালের চুলের গোড়া হতে দু'পাশের কানের লতী হয়ে খুঁতনীর নিচ পর্যন্ত খুব ভালভাবে ধৌত করতে হবে।
২। উভয় হাতের কনুইসহ ধৌত করা। হাত ধৌত করার সময় প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত উত্তমরূপে পানি প্রবাহিত করে ধৌত করতে হবে।
৩। মাথা মাসেহ করা। কারো মতে সমস্ত মাথা, কারো মতে অর্ধেক, কারো মতে সামনের অংশটুকু মাসেহ করা। তবে সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে দু'হাতের কনিষ্ঠা হতে মধ্যমা পর্যন্ত তিন আঙ্গুলের মাথা মাথা মিলিয়ে প্রথমে আঙ্গুলের পেট দিয়ে কপালের চুলের গোড়া হতে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে পরে আঙ্গুলসমূহ খাড়াভাবে করে হাতের তালু দ্বারা চুল মাসেহ করে সামনের দিকে টেনে আনবে, এরপর দু'হাতের পিঠ দিয়ে ঘাড় মাসেহ করে নেবে।
৪। উভয় পায়ের টাখনু (গিরা) পর্যন্ত ধৌত করা। পা ধৌত করার সময় প্রথমে ডান পায়ের টাখনু ও পরে বাম পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে।
অযূর সুন্নাতসমূহ
অযু করার সময় ১৩টি কাজ সুন্নাত। যেমন- ১। বিসমিল্লাহ বলে অযূ আরম্ভকরা। ২। দু'হাতের কব্জী পর্যন্ত ধৌত করা। ৩। তিনবার কুলি করা। ৪। মেছওয়াক করা। ৫। দাঁড়ি খিলাল করা। ৬। দু'হাতের অঙ্গুলি খিলাল করা। ৭। অযুর ফরয অঙ্গসমূহ তিনবার করে ধৌত করা। ৮। সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। ৯। উভয় কান মাসেহ করা। ১০। নিয়্যত করা। ১১। ক্রমধারা বজায় রাখা। ১২। অযূর অঙ্গসমূহ পরপর ধৌত করা। ১৩। তিনবার নাকে পানি দেয়া।
অযূর মুস্তাহাবসমূহ
অযুর মুস্তাহাব কাজ ১৩টি। যথা- ১। কিবলামুখী হয়ে বসা। ২। উঁচু স্থানে বসে অযু করা। ৩। অযূর বদনা-লোটা বা পাত্র বাম পার্শ্বে রাখা। ৪। ডানদিক হতে অযু আরম্ভ করা। ৫। ডান হাতের তালু দ্বারা নাকে পানি দিয়ে বাম হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাক সাফ করা। ৬। ঘাড় মাসেহ করা। ৭। ঘঁসে-মেজে অযূর অঙ্গসমূহ ধৌত করা, যাতে একটি চুলের গোড়া পরিমাণ স্থানও শুকনা না থাকে।
৮। বাম হাত দ্বারা উভয় পা খিলাল করে ধৌত করা। ৯। অযু করার সময় অন্যের সাহায্য না নেয়া। ১০। অযূর শেষে কিবলামুখী হয়ে অযূর উদ্বৃত্ত কিছু পানি পান করা ১১। অযূর শেষে সূরায়ে কদর এবং আকাশের দিকে মুখ করে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া। ১২। অযু আরম্ভ করার সময় উল্লিখিত নিয়মে বিসমিল্লাহ বলা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ধৌত করার সময় দোয়া পড়া।
অযূর মাকরুহসমূহ
অযূর মাকরুহসমূহ আটটি। যথা-১। মুখমণ্ডল ধৌত করার সময় খুব জোরে মুখে পানি নিক্ষেপ করা। ২। বাম হাতে মুখ ও নাকে পানি দেয়া। ৩। একবারের বেশি মাথা মাসেহ করা। ৪। অযূর অঙ্গসমূহ তিনবারের বেশি ধৌত করা। ৫। বিনা দরকারে অতিরিক্ত পানি খরচ করা। ৬। অন্যমনস্ক হয়ে অযুর ক্রমধারা রক্ষা না করা। ৭। নাপাক-অপবিত্র স্থানে বসে অযু করা। ৮। অযু করার সময় দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা।
অযু ভঙ্গের কারণসমূহ
নিম্নলিখিত কারণে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়: যথা-
১। পেশাব-পায়খানা করলে। ২। পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওদী, মনী, মযী, পোকা ইত্যাদি জাতীয় কোনকিছু বের হলে। ৩। শরীরের কোন জখমী স্থান হতে রক্ত পুঁজ বা রস ইত্যাদি বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে। ৪। পেশাবের বেগ হয়ে কিছু প্রস্রাব বের হলে।
৫। দাঁতের গোড়ালী বা মুখের ভেতর হতে রক্ত বের হয়ে মুখের থুথু পরিমাণ কিংবা কিছু পরিমাণ বেশি হলে। ৬। মুখ ভরে বমি হলে। ৭। পাগল কিংবা উন্মাদ হলে। ৮। নেশাযুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর অজ্ঞান হলে। ৯। স্বামী-স্ত্রী সঙ্গম করলে এতে অযু ভঙ্গ হবে আর মনি বের হলে গোসল করতে হবে। ১০। কোন কিছুর সাথে হেলান দিয়ে ঘুমালে।
১১। ঘুমে অচেতন হয়ে পড়লে। ১২। নামাযের মধ্যে অট্টহাসি হাসলে। ১৩। কারও ওরীশ বের হলে হাতে ধরে তা ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিলে। ১৪। নাকের ভেতর দিয়ে কোন কিছু ঢুকে মুখ দিয়ে বের হয়ে আসলে কিংবা মুখ দিয়ে কিছু প্রবেশ করে নাক দিয়ে বের হয়ে আসলে।
যেসব কারণে অযূ নষ্ট হয় না
অজ্ঞাতসারে আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করে থাকেন যে, নিম্নের কাজগুলো করলে অযু নষ্ট হয়ে যায়। আসলে এসব ধারণা বাতুলতা বৈ আর কিছু নয়। কিন্তু যদিও এতে অযু ভঙ্গ হয় না তবুও মুসলমানদের জন্য এসব কাজগুলো হতে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। যথাঃ
(ক) অযু করার পর কোন বেগানা পুরুষের সাথে মহিলাদের সাক্ষাৎ হওয়া। (খ) হাঁটুর উপর কাপড় উঠা কিংবা সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে যাওয়া। (গ) সরাসরি লিঙ্গে স্পর্শ করা। (ঘ) স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে চুম্বন করলে বা কাপড়ের উপর দিয়ে উভয়ের লিঙ্গ ঘষাঘষি করলে এতে মজী বা বীর্যপাত না হলে।
(ঙ) গানবাদ্য শুনলে। (চ) বাজে আলাপ করলে বা গালি-গালাজ করলে। (ছ) খাওয়া-দাওয়া করলে কিংবা গরম কোন খাদ্য ভক্ষণ করলে। (জ) উটের গোশত খেলে, বা কোন প্রকার (হালাল প্রাণীর) গোস্ত খেলে।
অযু করার সঠিক পদ্ধতি
পেশাব-পায়খানার কাজ সেরে খুব ভালো করে পরিষ্কার হয়ে মেছওয়াক দ্বারা দাঁতন করবে। অযু করার পূর্বে মেছওয়াক করাকে অবশ্যই দরকারী মনে করবে। কেননা এতে অনেক ফযীলত রয়েছে বলে পবিত্র হাদীসে রাসূলে কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন- "মেছওয়াক করার পর যে নামায আদায় করা হয় তার প্রতি রাক'আত নামায বিনা মেছওয়াকে সত্তর রাক'আত নামায হতেও উত্তম।"
মেছওয়াক করার পর সম্ভব হলে একটু উঁচু স্থানে কিবলামুখী হয়ে বসে দু'হাতের কজি পর্যন্ত প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত তিনবার করে খুব ভালভাবে ধৌত করবে। এরপর ভালোভাবে গরগরাসহ তিনবার কুলি করবে। এরপর উত্তমরূপে এক কানের লতি হতে অপরকানের লতি এবং কপালের চুলের গোড়া হতে আরম্ভকরে থুতনীর নিচে পর্যন্ত ভালভাবে পানি দ্বারা ধৌত করবে।
এরপর খুব ভালভাবে দু'হাতের কনুই পর্যন্ত (প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত) তিনবার ধৌত করবে। এরপর সমস্ত মাথা যথানিয়মে মাসেহ করবে। এরপর দু'পায়ের টাখনু (গিরা) পর্যন্ত (প্রথমে ডান পা পরে বাম পা) ভালভাবে আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে খিলাল করে ধৌত করবে।
প্রকাশ থাকে যে, অযু করার সময় অবশ্যই ক্রমধারা এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গসমূহ ধৌত করার সময় যাতে এক চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনা না থাকে সে দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখবে।
এভাবে অযু শেষ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে।
اشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مَحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ وَاجْعَلْنِي مِنْ عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنِ وَاجْعَلْنِي مِنَ الَّذِينَ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ .
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান 'আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আল্লাহুম্মাজ 'আলনী মিনাত্তাওয়্যাবীনা ওয়াজ'আলনী মিনাল মুতাত্বাহিরীনা ওয়াজ'আলনী মিন 'ইবাদিকাছ ছালিহীনা ওয়াজ'আলনী মিনাল্লাযীনা লা খাওফুন 'আলাইহিম ওয়ালা হুম ইয়াহ্যানূনা।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মহান আল্লাহ্ পাক ছাড়া অন্য কেউ 'ইবাদাতের যোগ্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, রাসূলে আকরাম (সাঃ) আল্লাহর বান্দা এবং প্রেরিত রাসূল। হে আল্লাহ্! আমাকে তাওবাকারীগণের দলভুক্ত কর এবং আমাকে পবিত্রাত্মাগণের শ্রেণীভুক্ত কর এবং তোমার নেক বান্দাগণের দলভুক্ত কর, আর ঐ সমস্ত লোকদের শ্রেণীভুক্ত কর যাদের কোনরূপ ভয়ভীতি বা চিন্তা থাকবে না।
অযূর নিয়্যত
نويت أَنْ أَتَوَضَّا لِرَفْعِ الْحَدِثِ وَاسْتِبَاحَةُ لِلصَّلُوةِ وَتَقَرَّبَا إِلَى اللهِ تَعَالَى .
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আতাওয়াযযআ লিরাফ'ইল হাদাছি ওয়াস্তি বাহাতাল লিচ্ছালাতি ওয়া তাক্বাররুবান ইলাল্লাহি তা'আলা।
অর্থ: নাপাকী ও অপবিত্রতা দূর করে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে শুদ্ধভাবে নামায আদায় এবং মহান আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করার উদ্দেশ্যে অযু করার মনস্থ করলাম।
অযূ শুরু করার দোয়া
بسمِ اللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى دِيْنِ الْإِسْلَامِ الْإِسْلَامُ حَقٌّ وَالْكُفْرُ بَاطِلُ الْإِسْلَامُ نُورٌ وَالْكُفْرُ ظُلْمَةٌ .
উচ্চারণ: বিছমিল্লাহিল 'আলিয়্যিল 'আযীমি। ওয়ালহামদু লিল্লাহি 'আলা দ্বীনিল ইসলামি। আল-ইসলাম হাক্বকুন ওয়াল কুফরু বাত্বেলুন, আল-ইসলামু নূরুন ওয়ালকুফরু যুলমাতুন।
অর্থ: মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে ইসলাম ধর্মের মধ্যে রেখেছেন। পবিত্র ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম আর কুফরী ভ্রান্ত ও মিথ্যা। ইসলাম ধর্ম আলোময় আর কুফরী অন্ধকার।

![ওযু করার নিয়ম, কিভাবে ওযু করবেন, ওযুর বিবরণ, ওযুর গুরুত্ব সম্পর্কে কী জান? অযু: ভিতর-বাহিরের পবিত্রতা অর্জনের উপায়, অজুর বর্ণনা, অজুর ফজিলত-আমল সম্পর্কে নবিজির চমৎকার ঘোষণা, ozu korar niyam, ওযুর বয়ান, ওযুর ভুল, অজু কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী, অজুর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন, অযু করার সঠিক নিয়ম | নামাজের অযু, ওজুর মাসায়েল, ওযু কিভাবে শুরু ও শেষ করব? - [ওযূর পদ্ধতি], ওযু করার নিয়ম, কিভাবে ওযু করবেন, ওযুর বিবরণ, ওযুর গুরুত্ব সম্পর্কে কী জান?,](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgRx7FXjtKvLX0yeegYL_bBsYaDnTRq2OvVA89Mq-HsPho5e8c_KOuPE_wF_YPlbGojNuSKlbM59fV-Sa7USgiHLGtJWPRfYBDkjMzbofnv9I4tkoqlzZFvVznCayGt6ewlO6NEQWE35SquybolqJkZpxaMWVB7WEcmjXF3a1WBA_TVt0TQZ1KQrR5FJYM/s16000/%E0%A6%93%E0%A6%AF%E0%A7%81%20%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%AE,%20%E0%A6%93%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%B0%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%A3,%20%E0%A6%93%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%B0%20%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC%20%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87%20%E0%A6%95%E0%A7%80%20%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8,%20%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%20%E0%A6%93%E0%A6%AF%E0%A7%81%20%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%A8.jpg)
0 Comments