মহিলাদের জন্য আবশ্যকীয় ধর্মীয় বিধান, হায়েয-নিফাসের বয়ান, হায়েজ ও নেফাসের সময়সীমা

মহিলাদের জন্য আবশ্যকীয় ধর্মীয় বিধান, হায়েয-নিফাসের বয়ান, হায়েজ ও নেফাসের সময়সীমা


হায়েয-নিফাসের বয়ান, নেফাস বন্ধ হওয়ার আলামত, হায়েজ ও নেফাসের সময়সীমা, হায়েজ নেফাস কি, সিজারে বাচ্চা হলে নেফাসের হুকুম কি, নেফাস অবস্থায় আমল, হায়েজ নেফাস ইস্তেহাজা, হায়েজ নেফাসের মাসআলা, Mahilādēra jan'ya ābaśyakīẏa dharmīẏa bidhāna, mahilader janya abasyakiya dharmiya bidhana, নেফাস অবস্থায় রোজা, hayez nefas, hayez mane ki, নেফাস বন্ধ হওয়ার আলামত, হায়েজ ও নেফাসের সময়সীমা, হায়েজ নেফাস কি, সিজারে বাচ্চা হলে নেফাসের হুকুম কি, নেফাস অবস্থায় আমল, হায়েজ নেফাস ইস্তেহাজা, হায়েজ নেফাসের মাসআলা, নেফাস অবস্থায় রোজা, নেফাসের সময়সীমা, হায়েয, নিফাস এবং ইস্তিহাযা সম্পর্কিত মাসআলা, হায়েজ ও নিফাসের বিধান, নেফাস বন্ধ হওয়ার আলামত, হায়েজ ও নেফাসের সময়সীমা, হায়েজ নেফাস কি, সিজারে বাচ্চা হলে নেফাসের হুকুম কি, নেফাস অবস্থায় আমল, হায়েজ নেফাস ইস্তেহাজা, হায়েজ নেফাসের মাসআলা, নেফাস অবস্থায় রোজা, হায়েয নেফাসের সময়সীমা,

হায়েয-নিফাসের বয়ান

হায়েয: স্ত্রীলোকের ৯ বছর বয়স হতে আরম্ভ করে ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত কতিপয় দিন বিশেষ স্থান দিয়ে যে রক্তস্রাব হয় ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় তাকে হায়েয বলা হয়।

হায়েযের সময়সীমা: হায়েযের সর্বনিম্ন সময়সীমা ৩ দিন আর সর্বোচ্চ সময়সীমা ১০ দিন। নির্দ্ধারিত সময়সীমার কম বা বেশি হলে তা ইস্তেহাযা বা রোগ বলে গণ্য হবে।

বর্ণ (নমুনা): স্রাবের রক্তের রং লাল, কাল কিংবা মাটিয়া রং যে রং-ই হোক না কেন একে হায়েযের খুন মনে করতে হবে এবং এ সময় উক্ত হায়েযা মহিলাদেরকে নামায পড়তে হবে না এবং রোযা রাখতেও হবে না। তবে এ সময়ের নামাযের জন্য কাযা-কাফফারা লাগবে না। কিন্তু রোযাগুলোর কাযা করতে হবে। mahilader janya abasyakiya dharmiya bidhana.

হায়েয ওয়ালী বা ঋতুবতী মহিলাদের বেলায় মসজিদে প্রবেশ করা এবং কা'বা শরীফের তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। এ সময়ের মধ্যে স্ত্রী সহবাস করাও নিষিদ্ধ। কিন্তু মাথা হতে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত ব্যবহার হিসেবে চুম্বন, আলিঙ্গন ও উপভোগ করতে নিষেধ নেই। তবে উত্তেজনাবশত যদি সহবাসের সম্ভাবনা থাকে তাহলে এসব কাজ হতে বিরত থাকা কিংবা প্রয়োজনে পৃথকভাবে থাকা বাঞ্ছনীয়।

হায়েয সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় জ্ঞাতব্য বিষয়

উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে আরও কয়েকটি মাসয়ালা জেনে রাখা দরকার।

যেমনঃ কোন মহিলার স্রাবের নিয়ম ছিল ৩ দিন। কিন্তু হঠাৎ এক মাসে দেখা গেল, ৩ দিন কিংবা তারও পূর্বে বন্ধ হয়ে যায় তবে ৩ দিনের ঊর্ধের দিনগুলোকে নতুন নিয়ম হিসেবেই মনে করতে হবে এবং এ সময়ের জন্য নামাযের কাযা আদায় করতে হবে না। আর যদি স্রাবের সীমা ১০ দিনের বেশি অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তাহলে তাকে রোগ বলে ধারণা করে প্রথম তিনদিন বাদ দিয়ে বাকি সময়ের জন্য নামাযের কাযা আদায় করে নিতে হবে।

কোন মহিলার ৫/৭/৯ দিন স্রাবের নিয়ম ছিল কিন্তু যদি ঐ সময়ের মধ্যে স্রাব বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সাথে সাথে সে মহিলার উপর গোসল করা ফরয হয়ে যাবে এবং যথারীতি নামায আদায় করতে হবে। এ সময়ে স্বামী-স্ত্রীতে সহবাস করতে পারবে।

কোন মহিলার স্রাবের নিয়ম ছিল ৫ দিন, হঠাৎ করে কোন মাসে ৪ দিন পরই স্রাব বন্ধ হয়ে যায় তখন ঐ হায়েযওয়ালী মহিলার গোসল করে নামায আদায় করতে হবে। তবে কিন্তু ৫ দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে সহবাস করতে পারবে না। কারণ হয়তবা পুনরায় স্রাব আরম্ভ হতে পারে।

পূর্ণ ১০ দিন স্রাবের পর যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায় তবে গোসলের পূর্বেও সহবাস করা জায়েয আছে।
কোন মহিলার স্রাবের নিয়ম যদি ১০ দিনের কম হয় এবং নামাযের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে স্রাব বন্ধ হয়ে থাকে, তখন দেখতে হবে যদি অযু-গোসল সেরে এসে নিয়্যত করে শুধুমাত্র তাকবীরে তাহরীমা বাঁধার মত সময় হাতে থাকে তবে ঐ ওয়াক্তের নামায পড়তে হবে এবং পরবর্তীতে ঐ ওয়াক্তের নামাযের কাযা আদায় করতে হবে। আর যদি এটুকু সময় না থাকে তবেই কেবল ঐ ওয়াক্তের নামায ক্ষমা হবে।

স্রাবের রক্ত অঙ্গের বাইরে না আসা পর্যন্ত স্রাব হিসেবে গণ্য হবে না। যেমন ছিদ্রের মধ্যে তুলার গিদ্দা দিয়ে রাখার ফলে রক্ত বন্ধ থাকলে সে সময়কে স্রাব হিসেবে গণ্য করা হবে না। তুলা টেনে বের করলে এবং বাইরের চামড়া পর্যন্ত রক্তের চিহ্ন এসে দেখা গেলে হায়েয় আরম্ভ হয়েছে বলে মনে করবে।

এশার নামাযের পর কোন মহিলা যদি 'পবিত্রতার সাথে স্ত্রী অঙ্গের ভেতর তুলার গাদ্দি রেখে ঘুমিয়ে পড়ে এবং ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে ঐ তুলার মধ্যে রক্তের চিহ্ন দেখে, তখন ঐ দেখার সময় হতেই স্রাব আরম্ভ হয়েছে বলে গণ্য হবে।

রমযান মাসে দিনের যে কোন সময় স্রাব বন্ধ হয় তখনই সাথে সাথে গোসল করে নিতে হবে আর নামাযের সময় থাকলে নামায আদায় করবে। আর ঐ সময় তথা গোসলের পর হতে ইফতার পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রাখতে হবে এবং পরবর্তীতে ঐ দিনের জন্য রোযার কাযা আদায় করতে হবে।

যদি কোন মহিলার পূর্ণ ১০ দিনের হায়েয রাতের এমন সময়ে শেষ হয় যে, গোসলের কাজ সমাধা করে এসে একবার মাত্র আল্লাহু আকবার বলার মত সময়ও না থাকে তবুও তাকে পরের দিনের জন্য রোযা রাখতে হবে। আর যদি পূর্ণ ১০ দিনের কম সময়ের স্রাব রাতের এমন সময়ে শেষ হয় যে, গোসল কার্য সমাধা করার পর একবারও আল্লাহু আকবার বলার মত সময় না থাকে সে অবস্থায়ও রোযা রাখতে হবে। এতে গোসল সকালে করলেও চলবে। তবে নিয়্যত করে নিতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে এ রোযার কাযাও আদায় করতে হবে।

নিফাসের বিবরণ

গর্ভপাত হবার পর মহিলাদের জরায়ু থেকে যে রক্তস্রাব বের হয় ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় তাকে নিফাস বলা হয়।

সময়কাল: নিফাসের নিম্নতম কোন সময়সীমা নির্ধারিত নেই। এর সর্বোচ্চ সময়সীমা হল ৪০ দিন। কারণ কোন কোন মহিলাদের ক্ষেত্রে ২/৩ ঘণ্টা পরই দেখা যায় রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।

নিফাস সম্পর্কিত কতিপয় জ্ঞাতব্য বিষয়

উল্লেখ্য যে, নিফাস সম্পর্কে কয়েকটি মাসয়ালা জেনে রাখা দরকার। যেমন-
সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর যদি মহিলাদের মোটেও রক্তস্রাব না হয়, তবে তার উপর গোসল করা ফরয হয়ে যাবে।

নিফাসকালীন সময়ে নামায পড়তে হবে না এবং ঐ সময়ের জন্য কোনরূপ কাযাও করতে হবে না। কিন্তু যদি রমজানের ফরয রোযা হয়, তাহলে পবিত্র হবার পর সে সময়কার রোযাসমূহের কাযা আদায় করতে হবে। এ সময় মহিলাদের জন্য নামায পড়া, রোযা রাখা, স্বামীর সাথে সহবাস এসব কাজসমূহ করা নিষেধ।

প্রসবের সময় সন্তান অর্ধেকের চেয়েও বেশি বের হবার পর যে রক্তস্রাব হয়ে থাকে উক্ত রক্তস্রাবকেই ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় নিফাস বলে। আর প্রসবের পূর্বে যদি কোনরূপ স্রাব হয়ে থাকে তাহলে সে স্রাবকে ইস্তেহাযা বলে।

প্রসব আরম্ভ হবার পর সন্তান ভূমিষ্ঠ না হয়ে প্রসবিনী মহিলার সংজ্ঞা বিদ্যমান থাকলে কিংবা বেদনার কারণে কষ্ট হলেও ইশারার মাধ্যমে সময় হলে নামায আদায় করে নিতে হবে। আর যদি নামায পড়তে গিয়ে নিজের অথবা সন্তানের প্রাণনাশের সম্ভাবনা থাকে তবেই কেবল নামায ছেড়ে দেয়া যাবে।

স্বাভাবিকভাবে কোন মহিলার গর্ভপাতের সময় সন্তানের হাত-পা কিংবা মাংসপিণ্ডের মত বের হবার ফলে যে স্রাব হয়, উক্ত স্রাবকে নিফাস বলে। আর যদি সন্তানের কোন অংগ বা আকৃতি দেখা না যায়, কেবলমাত্র একটি মাংসপিণ্ড নজরে এসে থাকে, তাহলে দেখতে হবে যে, ইতিপূর্বে কমপক্ষে সে ১৫ দিন পর্যন্ত পবিত্র ছিল কি না? 

এবং সর্বনিম্ন ৩ দিন ৩ রাত পর্যন্ত রক্তস্রাব হয়েছিল কি না? এরূপ অবস্থা হয়ে থাকলে নামায, রোযা এসব কিছু করা যাবে না। আর এর ব্যতিক্রম হয়ে থাকলে তা ইস্তেহাযা বা রোগ বলে গণ্য হবে এবং এ সময়ের নামায ও রোযাসমূহের কাযা আদায় করতে হবে।

কোন মহিলার ৪০ দিনের পূর্বেই নিফাস বন্ধ হয়ে গেলে সাথে সাথে সে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে নামায আদায় করে নিবে। আর গোসল করার ফলে স্বাস্থ্যহানি বা কোন প্রকার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকলে (নিফাসের পর) তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জন করে নামায আদায় করতে হবে।

মহিলাদের হায়েয ও নিফাসকালীন সময়ে পবিত্র কোরআন শরীফের পূর্ণ কোন আয়াত পাঠ করা যাবে না, তবে কোন আয়াতের সামান্য কোন শব্দ বা অংশ উচ্চারণ করা যাবে। ছোট আয়াতের সমপরিমাণ হয়ে যায় বড় আয়াতের এমন কোন অংশও পাঠ করা যাবে না।

মহিলাদের হায়েযকালীন সময়ে পবিত্র কোরআন মজিদ স্পর্শ করা জায়েয নেই। তবে জুযদানি কিংবা অন্য কোন পবিত্র কাপড় দ্বারা আচ্ছাদন অবস্থায় স্পর্শ করা জায়েয আছে। পরনের কাপড় কিংবা ময়লা নাপাক কোন কাপড় দ্বারা কোনভাবেই স্পর্শ করা বৈধ হবে না।

হায়েয ও নিফাসকালীন সময়ে দোয়া-মুনাজাত করা জায়েয আছে। এ সময়ে কোরআন শরীফের উল্লিখিত কোন আয়াত মুখস্থ পড়াতে কোন দোষ নেই। যেমন-আলহামদুলিল্লাহ, রাব্বানা জ্বালামনা আনফুসানা, রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা 'আযাবান্নার ইত্যাদি দোয়াসমূহ।

রক্তস্রাব অবস্থায় কোন মহিলা যদি তার ছাত্র/ছাত্রীদেরকে পড়াতে ইচ্ছা করে-তবে ঐ মহিলা কোরআন মজিদ স্পর্শ না করে নিজে পৃথক থেকে ভাংগা ভাংগা ভাবে আয়াতের বানান করিয়ে দিতে পারবে, তবে কোন অবস্থাতেই একটানে পুরা আয়াত উচ্চারণ করতে পারবে না। বরং এক রা দু'শব্দ করে পুরা আয়াত বলে দিতে পারবে।

হায়েয অবস্থায় যেসব কাজ করা জায়েয নেই নিফাসের সময়ও সেসব কাজ-করা যাবে না। এরূপ অবস্থায় কালিমা মজিদ, দরূদ মজিদ ও আল্লাহ্ যিকির এবং ইস্তেগফারের দোয়া ইত্যাদি এগুলো (মুখস্থ) পড়া যাবে।

ইস্তেহাযার বিবরণ

হায়েয ও নিফাসের নিম্নতম ও ঊর্ধতম সময়ের বাইরে মহিলাদের বিশেষ অঙ্গ দিয়ে যে রক্ত বের হয় ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় তাকে ইস্তেহাযা বলে। ইস্তেহাযা একটি রোগ।

ইস্তেহাযার হুকুম

ইস্তেহাযা যেহেতু হায়েয বা নিফাস নয় সুতরাং এ কারণে নামায- রোযার ব্যাপারে ক্ষমা কিংবা কোন শিথিলতা নেই, বরং নিয়মিতভাবে নামায আদায় করতে হবে এবং রোযা রাখতে হবে। এ সময়ে স্বামী-স্ত্রী একত্রে সহবাস করারও অনুমতি রয়েছে। একটি কথা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে, ইস্তেহাযা অবস্থায় প্রতি ওয়াক্ত নামাযের জন্য নতুনভাবে অযু করতে হবে।

যেমন-একজন ইস্তেহাযাওয়ালী মহিলা আছরের নামাযের জন্য অযু করল আর আছরের নামায আদায় করার পরও উক্ত মহিলার অযূ নষ্ট হয়নি এবং অযু ভঙ্গের কোন কারণও পাওয়া যায়নি এমতাবস্থায় যখনই আছরের নামায পড়ার সময় চলে গেল তখনই তার অযু নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মাগরিবের নামায আদায়ের জন্য নতুনভাবে অযু করতে হবে।

কিন্তু আছরের নামায আদায়ের জন্য যদি অযু করার পর ইস্তেহাযার রক্ত দেখা যায়, তাহলে সে অযু দ্বারাই সে আছরের নামায আদায় করতে পারবে। নতুন করে আছরের নামাযের জন্য অযু করতে হবে না কেননা যেহেতু সে মহিলা রোগিনী।

Post a Comment

0 Comments