আব্দুল মান্নান চৌধুরী শিঙ্গাইরকুড়ী (র.) এর জীবনী, হযরত আব্দুল মান্নান চৌধুরী শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ.) এর পরিচয়, হযরত আব্দুল মান্নান চৌধুরী শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ.) মাজার কোথায় অবস্থিত
জন্মঃ আল্লাহর মাহবুব বান্দা ওলীয়ে কামিল হযরত আল্লামা আব্দুল মান্নান চৌধুরী শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) ১৯১২ সালের এক শুভক্ষণে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী ইউনিয়নের অবস্থিত লিয়াকতপুর (শিঙ্গাইরকুড়ী) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম উছমান আলী চৌধুরী ও দাদা মোহাম্মদ রেজা চৌধুরী।
শিক্ষাজীবনঃ পারিবারিক ঐতিহ্য মোতাবেক তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গৃহ শিক্ষকের নিকট ও গ্রামের মসজিদে মক্তবে। সেই সময়ে তিনি কুরআন তিলাওয়াত শিখে ফেলেন এবং ইসলামী শিক্ষার প্রতি অনুপ্রাণিত হন। তাঁরই ব্যক্তিগত অভিপ্রায়ে উনার আব্বা মুহতারাম গঙ্গাজল হাসানিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেন।
গঙ্গাজল হাসানিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) তদানীন্তিন সময়ের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝিঙ্গাবাড়ি সিনিয়র মাদ্রাসায় ভর্তি হন। বলা যায় ঝিঙ্গাবাড়ি সিনিয়র মাদ্রাসাতে শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) এর উজ্জ্বল ভবিষ্যত প্রচ্ছন্নভাবে উদ্ভাসিত হয়েছিল।
হাতেম আলী ছাহেব খ্যাত হযরত মাওলানা শাহ আবু ইউসুফ মুহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (রহঃ) এর মকবুল হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ইলমে নববীর প্রাণকেন্দ্র দেওরাইল সিনিয়র মাদ্রাসা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) হাদীস, তাফসীর, ফিকহ, আকাঈদ, বালাগত, ফারাঈদ, মান্তিক, নাহু-ছরফ প্রভৃতি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। উত্তর ভারতের সর্ব প্রাচীন ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র রামপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে তাফসীর, ফিকহ, আকাঈদ, নাহু-ছরফ প্রভৃতি শাস্ত্রে গভীর পান্ডিত্য অর্জন করেন।
হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) প্রসিদ্ধ কারী হযরত মাওলানা আব্দুর রউফ শাহবাজপুরী করমপুরী (রহ) এর নিকট থেকে ইলমে কিরাতের সনদ লাভকরেন।
কর্মজীবনঃ রামপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে উচ্চ শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) ফিরে আসেন স্বীয় জন্মস্থান লিয়াকতপুরে। শিক্ষাজীবনের সর্বোচ্চ ধাপ কৃতিত্ত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বে প্রচার বিমুখ নিভূতচারী জ্ঞান তাপস কোন প্রসিদ্ধ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করেন নি, বরং নিরবে-নিভৃতে মহান মালিকের সান্নিধ্য অর্জনের নিমিত্তে তিনি মসজিদকেই বেছে নেন প্রিয় স্থান হিসেবে।
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতাঃ আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গ যাদের, যারা আল্লাহর বন্দেগী, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহব্বত হাসিল ও মানব সেবার ঐকান্তিক ইচ্ছা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেছেন তাদের দলে আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) এক আলোকিত ব্যক্তিত্ব। তিনি বহু সংখ্যক মাদ্রাসা, মসজিদ, ঈদগাহ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় তার একনিষ্ঠ অভিপ্রায়, নিঃস্বার্থ প্রচেষ্ঠা ও অমর অবদান সর্বমহলে সমাদৃত ও সুবিদিত। উল্লেখ্য যে হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ)স্ব-প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। পাশাপাশি এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
হজ্জ পালনঃ হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) আনুমানিক ১৯৪৫ সালে হজ্জ পালন করেন। হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ) ঐ বছর হজ্জ পালন করেন।
পারিবারিক জীবনঃ হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) অনাড়ম্বর জীবন-যাপনে অভ্যস্ত থেকে পারিবারিক জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাঁর জীবনে ৪টি বিবাহ সংঘটিত হয়েছে। সর্ব প্রথম তিনি বদরপুর (পিয়াইপুর) গ্রামের মুন্সি মন্তাজ আলীর এক মেয়ে সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে লিয়াকতপুর গ্রামের জনাব কুটি মিয়ার এক মেয়ের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। এ দুটি বিবাহ স্থায়ী হয়নি। তাদের গর্ভে শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) এর কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেন নি। তৃতীয় পর্যায়ে সুপ্রাকান্দি গ্রামের হযরত মাওলানা বশির উদ্দিন (বড় মৌলভী ছাহেব)- এর জৈষ্ঠ্য কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ বিবির গর্ভে উনার একজন ছেলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাওলানা উবায়দুর রহমান চৌধুরী (রহ)।
তৃতীয় বিবাহ বিচ্ছেদের পর হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) বারহাল ইউনিয়নের কেশরপুর নিবাসী মৌলভী ইছহাক আলীর তাপাদার সাহেবে কনিষ্ঠা কন্যা আশফাকুন্নেছার সাথে বিবাহ বিন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখময় ছিল। তাঁর গর্ভে হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) পাঁচজন ছাহেবজাদা ও নয়জন ছাহেবজাদি জন্মগ্রহণ করেন।
ছাহেবজাদাগণ হলেন- হযরত মাওলানা মোঃ ফজলুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মোঃ লুৎফুর রহমান চৌধুরী (বর্তমান শিঙ্গাইরকুড়ী পীর ছাহেব), মাওলানা মোঃ খলিলুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মোঃ মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মোঃ ওলিউর রহমান চৌধুরী। আর ছাহেবজাদী গণ হলেন- হাজেরা বেগম চৌধুরী, আমিনা বেগম চৌধুরী, জুবেদা বেগম চৌধুরী, রোকেয়া বেগম চৌধুরী, মরিয়ম বেগম চৌধুরী, তাহেরা বেগম চৌধুরী, হুছনা বেগম চৌধুরী, আছমা বেগম চৌধুরী ও রুশনা বেগম চৌধুরী।
মুর্শিদের কাছে আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ): বরাক উপত্যকায় সে সময় একজন নিভূতচারী আল্লাহর ওলী ছিলেন, যিনি সাধারণত জনসাধারণের কাছ থেকে আড়ালে থাকতে পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন ইহকালীন যশ-খ্যাতি ও সম্পদ প্রাচুর্য বিমুখ। এ ওলী হচ্ছেন কুতুবুল আফতাব হযরত মাওলানা আব্দুন নূর গড়কাপনি (রহঃ)।
বদরপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালীন অবস্থায় আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) এ নিভৃত সাধক, ওলীয়ে কামিল হযরত মাওলানা আব্দুন নুর গড়কাপনি (রহঃ) এর হাতে বাইয়াত হন। আশেকে রাসুল মাওলানা আব্দুন নুর গড়কাপনি (রহঃ) সহবতে ধন্য হয়ে ছিলেন আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ)।
তিনি যেমন স্বভাবের ও প্রকৃতির ছিলেন তাঁর মুর্শিদ ছিলেন তেমন স্বভাবের ও প্রকৃতির একজন একজন মহান বুযুর্গ ছিলেন। এজন্য দেখা যায়, পরবর্তীতে তিনি তাঁর মুর্শিদের অবিকল ছায়ার মত হয়েছিলেন। হযরত গড়কাপনি (রহঃ) খুব সুক্ষ্মভাবে ইলমে তরীকতের বিষয়গুলি পরখ করতেন এজন্য তিনি খেলাফত প্রদানে কঠোর ছিলেন। জানা যায়, আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) ছাড়া তিনি আর কাউকে খেলাফত প্রদান করেননি।
আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী ছাহেব (রহ) এর তরীকতের সিলসিলাঃ
নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দিদিয়া:
১। শাহ সূফী আল্লামা আব্দুল মান্নান চৌধুরী শিঙ্গাইরকুড়ী ছাহেব (র.) ২। কুতবুল ইরশাদ আল্লামা আব্দুন নূর গড়কাপনী কুদ্দিছা ছিররুহুল আযীয। ৩, আশিকে এলাহি আল্লামা আব্দুর রহমান মুরাদাবাদী (র.) ৪। আল্লামা তাওয়াক্কুল শাহ (র.) ৫। আল্লামা কাদির বখশ (র.) থেকে উর্ধতন হয়ে সাইয়িদুল মুরসালীন আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) পর্যন্ত পৌছেছে।
হযরত শিঙ্গাইরকুড়ি (রহ) তাঁর পীর ও মুর্শিদের নির্দেশক্রমে হযরত শাহ সুফী ইয়াকুব বদরপুরী (বুন্দাশিলী) (রহ) এর নিকট বায়আত গ্রহণ করে তাঁর নিকট থেকে চিশতিয়া, কাদিরীয়া, নকশবন্দিয়া মুজাদ্দিদিয়া ও মূহাম্মদিয়া তরীকার খেলাফত লাভ করেন।
হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) এর চিশতিয়া, কাদিরিয়া, নকশবন্দিয়া, মুজাদ্দিদিয়া ও মুহাম্মদিয়া তরীকার সিলসিলা নিম্নরূপ:
শাহ সূফী আল্লামা আব্দুল মান্নান চৌধুরী শিঙ্গাইরকুড়ী ছাহেব (র.) কুতবুল আউলিয়া হযরত মাওলানা আবু ইউসূফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র.). শামসুল আরিফীন হযরত মাওলানা শাহ্ হাফিয আহমদ সিদ্দীকী জৌনপুরী (র.) ০৪. তাঁর পিতা ও মুরশিদ হযরত মাওলানা শাহ্ কারামাত আলী সিদ্দীকী জৌনপুরী (র.) ০৫. ইমামুত্ তরীকাত, আমীরুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) ০৬. হযরত মাওলানা শাহ্ আবদুল আযীয দেহলভী (র.) ০৭. তাঁর পিতা ও মুরশিদ হযরত মাওলানা শাহ্ আহমদ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (র.) ০৮. তাঁর পিতা ও মুরশিদ হযরত মাওলানা শাহ্ আবদুর রহীম দেহলভী (র.) হযরত শাহ আবদুর রহীম মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) তিনটি সিলসিলায় বিভিন্ন তরীকার বায়আত ও ইজাযত হাসিল করেন।
আশিকে রাসুল হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) ইশকে রাসুল অর্জন ছাড়া ইলমে মারিফাত অর্জন সম্ভব নয়। ফানা ফির রাসুল স্তরে উত্তীর্ণ তরীকতের শায়খগণের মাঝে সাধারণত ইশকে রাসুলের প্রাবল্য থাকে। হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) আমল-আখলাক, সীরাত ও সুরতে সুন্নতে নববির পূর্ণ অনুসারী ছিলেন। তাঁর গোটা জীবন কুরআন-হাদীসের নির্দেশনা মত অতিবাহিত করেছিলেন।
সর্বাবস্থায় তাঁর মাঝে ইশকে রাসুলের ধারা বিদ্যামান ছিল। তিনি নিয়মিত মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দুরুদ ও সালাম পেশ করার সময় তাঁর অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যেত এবং চেহারার মাঝে নুরানী রৌশনী ঝলক দিত। এ নুরানী রৌশনীতে গোটা মাহফিল আলোকিত হওয়ার মতো ঘটনা তাঁর জীবনে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ) এর সাথে আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) এর সম্পর্কঃ
উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলীয়ে কামিল, শায়খুল মাশায়িখ, শামসুল উলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ) এর সাথে আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) এর খুব আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। বদরপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে উভয়ের মাঝে গভীর সম্পর্ক সৃষ্ঠি হয়েছিল। তা ওফাত পর্যন্ত অটুট ছিল।
রামপুর আলিয়ায়ও একই সময়ে উভয়ে অধ্যয়ন করেন। আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ) কুতবুল আফতাব হযরত শাহ ইয়াকুব বদরপুরী (বুন্দাশিলী) (রহঃ) এর খেলাফত লাভ করেন। অন্যদিকে আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) আরিফ বিল্লাহ হযরত মাওলানা আব্দুন নুর গড়কাপনি (রহঃ) এর কাছে খেলাফতপ্রাপ্ত হন। হযরত গড়কাপনি (রহঃ) এর নির্দেশে পরবর্তীতে আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) কুতবুল আফতাব হযরত শাহ ইয়াকুব বদরপুরী (বুন্দাশিলী) (রহঃ) এর খেলাফত লাভকরেন।
সত্যবাদিতাঃ জগতে যারা আল্লাহর মাহবুব বান্দা হয়েছেন, যারাই আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়েছেন তাঁদের সকলেই ছিলেন সত্যের দিশারী। মহাসত্যের সন্ধানে তাঁরা ছিলেন আত্মনিয়োজিত। সত্য-সাধনাই ছিল তাঁদের জীবনের মুল উদ্দেশ্যে। তাই তাঁরা সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিল ও ন্যায়-অন্যায়ের ক্ষেত্রে ছিলেন আপোষহীন। সত্যের সন্ধানী হযরত শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) এর ব্যতিক্রম ছিলেননা।
তিনি সদা সত্যবাদী ও স্পষ্ঠভাষী ছিলেন। মিথ্যার প্রলেপ ও সত্যের অপলাপ তাঁর নিকট অসহনীয় ছিল। কোন মুসলমান মিথ্যা কথা বলতে পারে এটা তিনি সহজে মেনে নিতে পারতেন না। গীবত-পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যা অপবাদ আরোপ, হিংসা বিদ্বেষ ইত্যাদি ছিল তাঁর চক্ষুশুল। যারা এ ধরণের কর্মে লিপ্ত তাদের প্রতি তাঁর প্রচন্ড ঘৃণা ছিল। এ ধরণের কাজে তিনি খুব মর্মাহত হতেন।
আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) এর তাকওয়াঃ একদা ছাব (রহ) এর খুব জ্বর উঠলো। জ্বরের মাত্রা এতো বেশী ছিল যে, কয়েকদিন থেকে জ্বর কমছে না দেখে সবাই বললেন ছাব, আপনি যদি তায়াম্মুমনা করে নামায পড়েন তাহলে আপনার ক্ষতি করবে। কারো কথা না শুনায় ডাক্তার ও বারবার বললেন, ছাব আপনি তায়াম্মুম করে নামায পড়ুন। না হলে আপনার ক্ষতি করবে।
ছাব (র) বললেন, না আমি তায়াম্মুম করে নামায পড়ব না, আমি ওযু করেই নামায পড়বো। কেননা, তায়াম্মুমে নামাযের কিছু নোকছান / কমতি হয়। এভাবেই উনি নামায পড়তে লাগলেন। পরে জ্বর ২২ দিন পরে কমেছিল। কিন্তু উনি তায়াম্মুম করে নামায পড়েন নাই।
আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) এর কারামাতঃ
কবরে আযাব দেখে পানি ছিটিয়ে দেয়াঃ
একদা হযরত আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) সকাল বেলা বেউর গ্রামে আসছিলেন। গ্রামের জামে মসজিদের উত্তরপার্শ্বে গোরস্থান। তিনি গোরস্হানের পাশ দিয়ে আসতে আহ কবরটি আগুনে জ্বলে গেল- বলে পেরেশান হয়ে গেলেন।
পরক্ষণে নিকটস্থ খাল থেকে এক আঁজলা পানি তুললেন এবং তাতে ফুঁক দিয়ে সংশ্লিষ্ঠ কবরের উপর ছিটিয়ে দিলেন। কথিত আছে জনৈক পাপীষ্ঠা মহিলা বিষপানে আত্নহত্যা করলে আগেরদিন তাকে ঐ গোরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। (কারী রইছ আলী খান শাহবাজপুরী (রহ) এটি বর্ণনা করেছেন)
মরা গরু জীবত হলো: হযরত আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) এর এক মেয়ের বিয়ে আপ্যায়নের জন্য একটি গরু কেনা হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের রাতে হঠাৎ ফাস লেগে গরুটি মারা যায়। এতে সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। মরা গরু যেহেতু ফেলা দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই, তাই ফেলে দেবার জন্য পাশের বাড়ির জনৈক (ডালুর বাবা) কে ডাকা হয়।
এ মন সময় শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) ফজর নামাজের জন্য ওযু করে মসজিদে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি উনাকে জানানো হলো, তিনি একাকী গরুর ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ থেমে মসজিদে চলে গেলেন। আল্লাহর তায়ালা কুদরতের বিচিত্র লীলা বুঝা মুশকিল। নিশ্চত মরা গরুটি জীবিত হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে হেটে হেটে পুকুর পাড়ে চলে গেল। উল্লেখ্য এই গরুটি জবাই করে বর পক্ষকে আপ্যায়ন করা হয়।
পাতিল ভেঙ্গে গেলোঃ গোলক নামে এক হিন্দু একবার হযরত আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) এর কাছে একটি মাঠির পাতিলে কিছু পানি নিয়ে তাতে ফুঁক দিতে বলে। তিনি ফুঁক দিলেন। লোকটার বোধ হয় এই ফুঁক দেওয়াতে পূর্ণ আস্থা আসেনি। তাই সে পুণরায় ফুঁক দিতে অনুরোধ করে তিনি তাকে মানা করেন। কিন্তু নাছোড় বান্দার মত সে আবদার করতে থাকে।
তার আব্দারের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পুণরায় ফুঁক দিলেন। ফুঁক দেয়ার মুহুর্তেই পাতিলটি ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায়। বিস্ময়কর এ কান্ড দেখে উপস্থিত সকলে হতবাক হয়ে পড়েন।
ইন্তেকাল: আল্লাহপাকের মাহবুব বান্দা হযরত আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) ১৯৮১ সালের ১৩ই অক্টোবর ৭০ বছর বয়সে পরম প্রিয় মুনিব ও মাওলার সান্নিধ্যে পাড়ি দেন। হযরত আল্লামা শিঙ্গাইরকুড়ী (রহ) তাঁর জীবদ্দশায় বাড়ির মসজিদের উত্তর পার্শ্বে তাঁর কবরের জায়গা দেখিয়ে যান। এখানেই তাঁকে চির শয়ানে সমাহিত করা হয়।
তথ্য সুত্রঃ মাওলানা কুতবুল আলম রচিত হযরত মাওলানা আব্দুল মান্নান চৌধুরী শিঙ্গাইরকুড়ী (রহঃ) এর জীবন ও কর্ম।
%20%E0%A6%8F%E0%A6%B0%20%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%80.jpg)
0 Comments