আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (র.) এর জীবনী, হযরত আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (রহ.) এর পরিচয়, হযরত আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (রহ.) মাজার কোথায় অবস্থিত
জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ মুরশিদে কামিল, রঈসুল কুররা, উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন হযরত আল্লামা মোঃ আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ আমাদের দেশে এক সুপরিচিত ওলী-আল্লাহর নাম।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) ১৯১৩ সালে (১৩২১ বাংলা) সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলাধীন ফুতলী গ্রামে এক প্রখ্যাত আলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুফতী মাওলানা আবদুল মজীদ চৌধুরী (র.) ছিলেন একজন স্বনামধন্য বিখ্যাত আলিমে দীন ও ফকীহ। তিনি অবিভক্ত ভারতের বাংলা আসাম অঞ্চলের একজন মশহুর বুযুর্গ ছিলেন।
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) হযরত শাহজালাল (র.)-এর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ কামাল (র.)-এর বংশের অধঃস্তন পুরুষ বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত শাহ আলা বখশ (র.)-এর বংশধর।
শিক্ষা জীবন:
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) ফুলতলী মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন তাঁর বংশীয় চাচাতো ভাই মাওলানা ফাতির আলী (র.)। এ সময় তিনি কারী সৈয়দ আলী সাহেবের নিকট কিরাত শিক্ষা গ্রহণ করেন। সে সময় তাঁর মুহতারাম পিতা গঙ্গাজল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
তাঁরই সুযোগ্য শাগরিদ হাইলাকান্দি রাঙ্গাউটি মাদরাসার সুপার, প্রখ্যাত ওলী মাওলানা আব্দুর রশিদ ছাহেব তাঁর শ্রদ্ধেয় উস্তাদের নিকট ফুলতলী ছাহেবকে এ মাদরাসায় ভর্তি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। ফলে ১৩৩৬ বাংলায় তিনি এ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
অতঃপর ১৩৩৮ বাংলায় বদরপুর সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হয়ে সুনামের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। উচ্চ শিক্ষা ও ইলমে হাদীসের সনদ অর্জন মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনান্তে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) তাঁর উস্তাদ ও মুরশিদ হযরত মাওলানা আবু ইউসূফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র.)-এর নির্দেশ মুতাবিক উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে ভারতের বিখ্যাত দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসায়ে আলিয়া রামপুরে ভর্তি হয়ে ফনুনাত সম্পন্ন করেন।
পরে ইলমে হাদীসের শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে মাতলাউল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হন এবং সুনামের সাথে অধ্যয়নের পর হাদীসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে ১৩৫৫ হিজরী সনে হাদীসের সনদ লাভ করেন। এ মাদরাসায় তাঁর হাদীসের উস্তাদ ছিলেন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত আল্লামা খলীলুল্লাহ রামপুরী (র.) ও আল্লামা ওয়াজীহ উদ্দীন রামপুরী (র.) প্রমুখ। ইলমে হাদীস ছাড়াও তিনি ইলমে তাফসীর ও ফিকহ শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
ইলমে কিরাতঃ ইসলামী জ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে 'ইলমে কিরাত'। ইলমে কিরাতে তাঁর সুযোগ্য শিক্ষক ছিলেন স্বীয় পীর ও মুরশিদ হযরত আবূ ইউসূফ শাহ মোঃ ইয়াকুব বদরপুরী (র.)। তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ফুলতলী ছাহেব কিরাত বিষয়ে আরো শিক্ষা গ্রহণ করেন উপমহাদেশের বিখ্যাত কারী হযরত মাওলানা হাফিয আবদুর রউফ করমপুরী শাহবাজপুরী (র.)-এর কাছ থেকে।
শাহবাজপুরী (র.) ছিলেন হযরত ইরকসূস মিসরী (র.)-এর ছাত্র। ১৯৪৪ ইং (১৩৫১ বাংলা) সনে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) মক্কা শরীফ গমন করে ইলমে কিরাতের আরো উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন শায়খুল কুররা হযরত আহমদ হিজাযী (র.)-এর কাছ থেকে।
আহমদ হিজাযী (র.) ছিলেন হারাম শরীফের ইমামগণের পরীক্ষক ও তৎকালীন বিশ্বের খ্যাতিমান কারীগণের উস্তাদ। তিনি শায়খুল কুররা হযরত আহমদ হিজাযী (র.)-এর কাছ থেকেও ১৯৪৬ ইং (১৩৫৩ বাংলা) সনে ইলমে কিরাতের সনদ লাভ করেন।
ইলমে তরীকতঃ আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) ছাত্রজীবনেই তরীকতের বায়আত হন ও খিলাফত লাভ করেন। ইলমে তাসাওউফে তাঁর মুরশিদ হযরত মাওলানা আবু ইউসুফ শাহ মোঃ ইয়াকুব বদরপুরী (র.)। হযরত বদরপুরী (র.) ছিলেন তৎকালীন শ্রেষ্ঠ আলিমে দীন ও সর্বজনমান্য বুযুর্গ। তিনি হাদিয়ে বাঙ্গাল হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী (র.)-এর সুযোগ্য ছাহেবজাদা ও খলীফা হযরত হাফিয আহমদ জৌনপুরী (র.)-এর খলীফা ছিলেন।
কৈশোরেই এক শোকাবহ দিনে হযরত বদরপুরী (র.)-এর সাথে হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর পরিচয় হয়। হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর পিতা হযরত মাওলানা আবদুল মজীদ চৌধুরী (র.)-এর ইন্তিকালের আগের দিন হযরত বদরপুরী (র.) জকিগঞ্জের আটগ্রামে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি হযরত মুফতী আবদুল মজীদ ছাহেব (ফুলতলী ছাহেবের আব্বা)-কে দেখতে যান।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত অসুস্থ, শয্যাশায়ী। বদরপুরী (র.) নির্ধারিত সফর বাতিল করে পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে অবস্থান করেন। এ দিন রাতেই মাওলানা আবদুল মজিদ চৌধুরী (র.) ইন্তিকাল করেন। পরদিন তাঁর জানাযায় হযরত বদরপুরী (র.) ইমামতি করেন। জানাযার পর যখন তাঁকে দাফনের কাজ চলছে, কিশোর ফুলতলী ছাহেব কবরের একপাশে বিষন্ন মনে বসে নিরবে চোখের পানি ফেলছেন, এমনি মুহূর্তে তিনি তাঁর পিঠে যাঁর দয়ার্দ্র হাতের পরশ অনুভব করলেন তিনি হলেন হযরত বদরপুরী (র.)।
মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য ফুলতলী ছাহেব হাইলাকান্দি মাদরাসায় ভর্তি হলেন। কিছুকাল পর একদিন বদরপুর অতিক্রম করার সময় বদরপুরী ছাহেবের সাথে দেখা হলো তাঁর। খোঁজ-খবর নিয়ে বদরপুর আলিয়া মাদরাসায় গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক জামাতে ভর্তি হতে বললেন বদরপুরী ছাহেব। তাঁর কথামতো ফুলতলী ছাহেব বদরপুর সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হলেন।
পীর-ওলীগণের মাযার যিয়ারত তাঁর খুব ভালো লাগত। আধ্যাত্মিকতা এবং বদরপুরী ছাহেব কিবলাহর প্রতি তাঁর মনে ছিল তীর আকর্ষণ। কিসের যেন এক টান সর্বদা অনুভব করতেন মনে। কিন্তু ঠিক নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, কোথায় কার নিকট বায়আত হবেন। অনেকটা সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন, বদরপুরী ছাহেব কিবলাহ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বরই (কুল) গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকছেন।
স্বপ্ন দেখে জেগে উঠলেন তিনি। রাত তখন দু'টা। ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন তরুণ ফুলতলী ছাহেব স্বপ্নের কোনো ব্যাখ্যা বুঝতে পারলেন না। ওযু করে দু'রাকাত নামায পড়ে আবার শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আবারো সেই একই স্বপ্ন-একই ইশারা। এবারও জেগে উঠলেন তিনি। স্বপ্নের গভীর তাৎপর্য বুঝতে বাকী রইল না।
ওযু করে লজিং থেকে বেরিয়ে পড়লেন পার্শ্ববর্তী গ্রাম বুন্দাশিলের উদ্দেশ্যে-বদরপুরী (র.)-এর বাড়ি যেখানে। গভীর রাতে ছাহেব বাড়িতে পৌঁছে দেখেন, স্বপ্নে যে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বদরপুরী ছাহেব তাঁকে ডাকতে দেখেছেন, ঠিক সেই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি! আলো আঁধারের মাঝে মানুষের অস্তিত্ব অনুমান করে বদরপুরী ছাহেব কিবলাহ তাঁর নাম ধরে বললেন, আব্দুল লতিফ এসেছো?
তিনি সালাম দিলেন। ছাহেব ওযু আছে কি না জানতে চাইলে ফুলতলী ছাহেব বললেন, আছে। আর কোনো কথা না বলে ভেতর বাড়ির নিজের কামরায় নিয়ে হাত ধরে বায়আত করালেন, তা'লীম-তাওয়াজ্জুহসহ সবক বাতলে দিলেন।
বায়আত হওয়ার পর থেকে আপন পীর ও মুরশিদ হযরত বদরপুরী (র.)-এর নির্দেশনা হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) যথাযথভাবে পালন করে যেতে থাকলেন। পীর ও মুরশিদের তা'লীম-তাওয়াজ্জুহের এক পর্যায়ে ছাত্রাবস্থায়ই মাত্র ১৮ বছর বয়সে ১৩৩৯ বাংলা সনে তিনি খিলাফত লাভ করেন। এটি ছিল হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহর অনন্য গুণাবলী বা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি।
তরীকতের সিলসিলাঃ হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) হযরত বদরপুরী (র.)-এর কাছে পাঁচ তরীকায় বায়আত হন। তরীকাগুলো হলো চিশতিয়া, কাদিরিয়া, নকশবন্দিয়া, মুজাদ্দিদিয়া এবং মুহাম্মদিয়া।
রামপুর অবস্থানকালে ছাহেব কিবলাহ (র.) স্বীয় মুরশিদের অনুমতিক্রমে সেখানকার চিশতিয়া নিজামিয়া তরীকার প্রখ্যাত বুযুর্গ হযরত মাওলানা গোলাম মুহিউদ্দীন (র.)-এর নিকট থেকে চিশতিয়া নিজামিয়া তরীকার বায়আতের ইজাযত লাভ করেন। হযরত গোলাম মুহিউদ্দীন (র.) তাঁকে দালাইলুল খায়রাতেরও ইজাযত প্রদান করেন।
হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর চিশতিয়া, কাদিরিয়া, নকশবন্দিয়া, মুজাদ্দিদিয়া ও মুহাম্মদিয়া তরীকার সিলসিলা নিম্নরূপ:
শামসুল উলামা হযরত আল্লামা মোঃ আব্দুল লতিফ ফুলতলী (র.) ০২. কুতুল আউলিয়া হযরত মাওলানা আবু ইউসূফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র.) ০৩. শামসুল আরিফীন হযরত মাওলানা শাহ্ হাফিয আহমদ সিদ্দীকী জৌনপুরী (র.) ০৪. তাঁর পিতা ও মুরশিদ হযরত মাওলানা শাহ্ কারামাত আলী সিদ্দীকী জৌনপুরী (র.) ০৫. ইমামুত্ তরীকাত, আমীরুল মু'মিনীন হযরত সায়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী (র.) ০৬. হযরত মাওলানা শাহ্ আবদুল আযীয দেহলভী (র.) ০৭. তাঁর পিতা ও মুরশিদ হযরত মাওলানা শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) ০৮. তাঁর পিতা ও মুরশিদ হযরত মাওলানা শাহ্ আবদুর রহীম দেহলভী (র.) হযরত শাহ আবদুর রহীম মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.) তিনটি সিলসিলায় বিভিন্ন তরীকার বায়আত ও ইজাযত হাসিল করেন।
ইলমে হাদীসের খিদমতঃ কর্মজীবনে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) ১৯৪৬ সালে বদরপুর আলিয়া মাদরাসায় যোগদান করে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। এরপর গাছবাড়ি জামেউল উলুম আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করে ছয় বছর সুনামের সাথে পাঠদান করেন।
তিনি এ সময় ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রিন্সিপাল হিসেবে গুরু দায়িত্ব আনজাম দেন। এরপর সুদীর্ঘকাল সৎপুর আলিয়া মাদরাসা ও ইছামতি আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে ইলমে হাদীসের খিদমত আনজাম দেন। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানে বুখারী, নাসাঈ, ইবন মাজাহ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইতকান, নূরুল আনোয়ার, আকাইদ, হিদায়া, জালালাইন প্রভৃতি উঁচু পর্যায়ের কিতাবাদি দক্ষতার সাথে পাঠদান করেন।
ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত সপ্তাহে দু'দিন ফুলতলী আলিয়া মাদরাসায় কামিল জামাতে বুখারী শরীফের দারস দিতেন। তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে পয়গামে ইলাহী ও তা'লীমে নববীর অমিয় সুধা পানে আলোকপ্রাপ্ত হয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। হঠাৎ। কাচারী
হাদীস শরীফের সনদ প্রদানঃ হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) দীর্ঘ প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ইলমে হাদীসের খিদমত করেছেন। বদরপুর আলিয়া মাদরাসা থেকে শুরু হওয়া খিদমতের ধারা ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তাঁর নিকট হাদীসের দারস গ্রহণকারী কতিপয়কে ২৭ এপ্রিল ২০০৬ তারিখে একটি সুন্দর মাহফিলের মাধ্যমে হাদীস শরীফের সনদ প্রদান করা হয়।
শুধু নির্বাচিত আবেদনকারীগণই সনদ লাভ করেন। এ উপলক্ষে হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর নিকট থেকে হাদীস শরীফের সনদ গ্রহণকারী শাগরিদ বৃন্দের পক্ষ থেকে 'রাহী মদীনা' নামে একটি স্মারকও প্রকাশিত হয়। স্মারকটিতে সনদ গ্রহণকারীদের তালিকাতে ৮১৬ জনের নাম, ঠিকানা ও কামিল পাশের সন ছাপা হয়েছে।
অবশ্য এর বাইরেও আল্লামা ফুলতলী (র.)-এর বহু সংখ্যক শাগরিদ রয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই তাঁর পূর্বে ইন্তিকাল করেছেন। অনেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদন করতে সক্ষম হননি। তাছাড়া বিদেশে অবস্থানসহ নানা কারণে অনেক শাগরিদ এখানে তালিকাভুক্তও হতে পারেননি।
ইলমে কিরাতের খিদমতঃ হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ ভারতের উত্তর প্রদেশের ঐতিহ্যবাহী রামপুর আলিয়া মাদরাসা থেকে তাফসীর, হাদীস ও ফিকহ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করে যখন ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ (বর্তমানে জেলা)-এর বদরপুর আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতায় নিয়োজিত, তখন তাঁর মুরশিদ হযরত মাওলানা আবূ ইউসূফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী (র.) তাঁকে বিশুদ্ধ কিরাত শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ তাকীদ প্রদান করেন। বদরপুরী (র.)-এর তাকীদের ব্যাপারে হযরত ফুলতলী (র.)-এর নিজের ভাষ্য নিম্নরূপ:
"সে সময় উলামায়ে কিরামের ধারণা ছিল যে, 'আমার কিরাত বিশুদ্ধ।' কিন্তু বদরপুরী ছাহেব কিবলাহ আমাকে সময় সময় বলতেন, 'তোমার কিরাত কিছুটা অশুদ্ধ।' একদিন বললেন, 'তোমার কিরাত বিশুদ্ধ করে নিলে ভবিষ্যতে ভালো হতো।' আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'কার নিকট থেকে কুরআন শরীফ গিয়ে শুদ্ধ করব?' উত্তরে বললেন, ভোগা নিবাসী মাওলানা আব্দুর রউফ করমপুরী ছাহেবের নিকট গিয়ে কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে নাও।"
মুরশিদের নির্দেশ পেয়ে তিনি প্রথমে বিশ্ববিখ্যাত কারী হযরত ইরকসূস মিসরী (র.)-এর অন্যতম শাগরিদ হযরত মাওলানা হাফিয আব্দুর রউফ করমপুরী (র.) ও পরবর্তীতে মক্কা শরীফের ইমামগণের পরীক্ষক, মিসরীয় বংশোদ্ভূত, রঈসুল কুররা হযরত আহমদ হিজাযী (র.)-এর নিকট কিরাতের শিক্ষা গ্রহণ করেন।
আল-কুরআনুল কারীম তারতীলের সাথে (শুদ্ধ পঠনপ্রণালী অনুযায়ী) তিলাওয়াতের শিক্ষা বিস্তার হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর অন্যতম প্রধান খিদমত। স্বপ্নে রাসূলে পাক (সা.)-এর ইঙ্গিতেই এ খিদমত শুরু হয়।
ঘটনাটি নিম্নরূপ: হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) মক্কা শরীফ হতে ফিরে পুনরায় যথারীতি বদরপুর আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষাদান শুরু করেন। একদিন হযরত ছাহেব কিবলাহ ক্লাসে ছাত্রদের দারস দেয়ার সময় সেখানে হযরত আবদুন নূর গড়কাপনী (র.) তাশরীফ নিলেন। সমকালীন খ্যাতনামা আলিম ও বুযুর্গ ছিলেন তিনি।
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ তাঁকে সমাদরে পাশে বসতে অনুরোধ করে পাঠদানে ব্যস্ত হলেন। ক্লাসের সময় শেষ হলে ছাহেব কিবলাহ তাঁর কুশলাদি ও আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, সর্বসাধারণ তো দূরের কথা এতদঞ্চলের বেশ কিছু সংখ্যক আলিমেরও কিরাত শুদ্ধ নয়। তাই ছাহেব কিবলাহ দারসে কিরাতের জন্য অন্তত সপ্তাহে ঘন্টাখানেক সময় যেন দেন আমাদের।
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ জবাবে বললেন, আমার হাতে সময় একেবারে কম, বিশেষ করে ক্লাসে ছাত্রদের পাঠদানের আগে নিজে ভালোভাবে তা দেখে নিতে হয়, তাই সময় দেয়া মোটেই সম্ভব নয়। একথার পর আবদুন নূর ছাহেব চলে গেলেন।
পরদিন ঠিক একইভাবে উপস্থিত হয়ে এ কথারই পুনরা বৃত্তি করলে ছাহেব কিবলাহ আবারও অপারগতা প্রকাশ করলেন। তখন হযরত আবদুন নূর (র.) বললেন, আমি নিজে থেকে আপনার নিকট আসিনি। বড় জায়গা থেকে নির্দেশ পেয়েই তবে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।
ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ তখন স্বীয় মুরশিদ হযরত বদরপুরী (র.)-এর নির্দেশ কিনা জানতে চাইলে হযরত আবদুন নূর (র.) বললেন, না আরো বড় জায়গা থেকে নির্দেশ পেয়েছি। ছাহেব কিবলাহর অনুরোধে তিনি বর্ণনা করলেন, 'স্বপ্নে হুযূর (সা.) কে দেখা গেল। আরয করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ, কুরআন শরীফের তিলাওয়াত শুনতে চাই।
রাসূল (সা.) তিলাওয়াত করে শুনালেন। আরয করলাম, এই কিরাত কিভাবে শিখব? তখন নবী করীম (সা.) ডান দিকে ইশারা করলেন। সেদিকে চেয়ে দেখা গেল, সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আপনি।' একথা শুনার সাথে সাথে হযরত ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ কেঁদে ফেললেন এবং তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, 'ঠিক আছে, আমি সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার ১২টার পরে নিকটবর্তী হযরত আদম খাকী (র.) (৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম)-এর মাযার সংলগ্ন মসজিদে কিরাতের দারস দেয়ার ওয়াদা দিলাম।'
এভাবেই ছাহেব কিবলাহর ইলমে কিরাতের খিদমতের সূত্রপাত। তিনি বিভিন্ন অঞ্চলে পায়ে হেটে, ঘোড়ায় চড়ে, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অবৈতনিকভাবে কিরাতের দারস দিয়েছেন।
১৯৫০ ইংরেজি সনে ছাহেব কিবলাহ নিজ বাড়িতে ইলমে কিরাতের দারস প্রথম চালু করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষকদের সুবিধার্থে ছুটির অবসরকালীন রামাদান মাসকে কিরাত শিক্ষার জন্য বেছে নেন তিনি। তাছাড়া রামাদান মাস হলো নুযুলে কুরআনের মাস।
প্রতি বছর রামাদানে ছাহেব কিবলাহ নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিজ খরচে বহন করতে থাকেন। দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তিনি সবাইকে তা'লীম দিয়ে এবং সমগ্র কুরআন শরীফ নিজে শুনে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে তাদের সনদ প্রদান করতেন।
পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অন্যান্য স্থানে শাখাকেন্দ্র অনুমোদন ও একটি বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই ৭ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের সদস্যদের অনুরোধক্রমে ছাহেব কিবলাহ'র ওয়ালিদ মুহতারাম হযরত মাওলানা মুফতী আবদুল মজীদ চৌধুরী (র.)-এর নামানুসারে এই প্রতিষ্ঠানের নাম রাখা হয় 'দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট'।
ছাহেব কিবলাহ তাঁর ভূ-সম্পত্তির বিশাল অংশ (প্রায় ৩৩ একর) এই ট্রাস্টের নামে ওয়াকফ করে দিয়েছেন। বর্তমানে এই বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় দেড় সহস্রাধিক শাখা কেন্দ্র দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
পারিবারিক জীবনঃ পারিবারিক জীবনে তিনি ১৩৪৫ বাংলায় তাঁর পীর ও মুরশিদ হযরত মাওলানা আবু ইউসুফ শাহ মোঃ ইয়াকুব বদরপুরী (র)-এর তৃতীয়া কন্যা মুহতারামা মুছাম্মত খাদিজা-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ তরফে চারজন ছাহেবজাদা ও তিন ছাহেবজাদী রয়েছেন।
তাঁরা হলেন হযরত আল্লামা মোঃ ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী (বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী), হযরত আল্লামা মোঃ নজমুদ্দীন চৌধুরী, মোছাম্মত করিমুন্নেছা চৌধুরী, হযরত মাওলানা মোঃ শিহাবুদ্দীন চৌধুরী, মোছাম্মত মাহতাবুন্নেছা চৌধুরী, মোছাম্মত আফতাবুন্নেছা চৌধুরী, মুফতি মাওলানা মো: গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী।
আল্লাহর রেযামন্দি তথা ইবাদত-বন্দেগীর এক পর্যায়ে বদরপুরী ছাহেব কিবলাহর এই ছাহেবজাদীর অন্তরে সংসারের প্রতি বিরাগ সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষিতে ছাহেব কিবলাহ তাঁর পীর ও মুরশিদ হযরত বদরপুরী (র)-এর নির্দেশে ফুলতলী গ্রামের মরহুম আব্দুর রশিদ খানের কন্যা মুহতারামা নেহারুন নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ তরফে তিন জন ছাহেবজাদা রয়েছেন।
তাঁরা হলেন- মাওলানা মুহাম্মদ কমরুদ্দীন চৌধুরী, হাফিয মাওলানা মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন চৌধুরী ও মাওলানা মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী।
রচনাবলীঃ
আত তানভীর আলাত তাফসীর
মুন্তাখাবুস সিয়র
আনওয়ারুছ ছালিকীন
আল খুতবাতুল ইয়াকুবিয়া
নালায়ে কলন্দর
শাজরায়ে তাইয়্যিবাহ
আল কাউলুছ ছাদীদ।
তার লেখা অনেক উর্দু ও আরবি গ্রন্থ ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে রয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের পাঠ্যসূচিতেও তার অনেক গ্রন্থ রয়েছে।
সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানঃ
দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া ফুলতলী
ট্রাস্ট বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ
বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া
দারুল হাদীস লতিফিয়া, ইউ. কে
লতিফিয়া ক্বারী সোসাইটি
দারুল হাদীস লতিফিয়াহ
লতিফিয়া এতীমখানা
হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদ্রাসা।
বাংলাদেশ আন্জুমানে মাদারিছে আরাবিয়া
লতিফিয়া কারী সোসাইটি
ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ড সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।
কারামতঃ
আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর
কয়েকটি কারামতঃ
ভেসে উঠল লাশ
হযরত নিজামুদ্দীন চৌধুরী বিশকুটি ছাহেব (র.) বর্ণনা করেছেন হযরত ফুলতলী (র.)-এর সাথে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল। আমরা বেশ কয়েক বার এক সাথে লন্ডন ও আমেরিকায় কাটিয়েছি। ফুলতলী ছাহেব যখন খুতবায়ে ইয়াকুবিয়া লেখেন তখন আমি ও মাওলানা মাহমুদুর রহমান বদরপুরী ছাহেব লন্ডনে তাঁর সাথে অনেক দিন ছিলাম।
তিনি ঐ খুতবা লন্ডনেই লিখেছেন। ২০০১ সালে আমেরিকার সাগর সৈকতে ভাদেশ্বরের আমেরিকা প্রবাসী আনছার আহমদের দুই মেয়েসহ তিন মেয়ে ডুবে মারা যায়। তাদের দু'জনের লাশ পাওয়া যায়নি। এ সময় ফুলতলী ছাহেব লন্ডনে ছিলেন। আমি আর বদরপুরী ছাহেবও এক সাথে ছিলাম।
এমন সময় মেয়েদের পিতা আনছার আহমদের পক্ষ হতে তাদের এক আত্মীয় পেরেশান হয়ে ফুলতলী ছাহেবের নিকট গেলেন। তিনি এ বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করলে আমি ফুলতলী ছাহেবের নিকট আনছার আহমদকে আমার আত্মীয় বলে পরিচয় দিলাম। এদিকে আলহাজ্জ আনছার আহমদের ছোট ভাই মনছুরও একই উদ্দেশ্যে আমেরিকা থেকে লন্ডন আসছেন। আমি ফুলতলী ছাহেবকে বিষয়টি বললাম।
তখন ফুলতলী ছাহেব কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে আবার খুললেন। তিনি খিজির (আ.)'র উদ্দেশে একটি চিঠি লিখে আমার হাতে দিয়ে বললেন, তাদেরকে বলে দেন, যে স্থানে মেয়েরা ডুবেছে ঐ স্থানে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। অনুভব করলাম, সাগর সৈকতে এরা কিভাবে আছে এবং কিভাবে উদ্ধার করা যায় তিনি সব কিছু চোখ বন্ধ করেই সিদ্ধান্ত নিলেন।
আমার মাধ্যমে আনছার আহমদের আত্মীয় চিঠি নিয়ে তাঁর ছোট ভাই মনছুরের নিকট লন্ডন এয়ারপোর্টে দিলেন। তাবিযটি ছাড়ার একদিন পর লাশগুলো ভেসে উঠতে আরম্ভকরে। অথচ ৭ দিন ধরে আমেরিকার মতো উন্নত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশের উদ্ধারকর্মীরা অনেক চেষ্টা করেও লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। একটি লাশ ভেসে উঠার সময় একটি বড় আকারের মাছও ভেসে উঠল। লাশের শরীরে মাছের দাঁতের চিহ্নও দেখতে পাওয়া গেল।
হযরত নিজামুদ্দীন চৌধুরী বিশকুটি ছাহেব কিবলাহ (র.) তিনি বিভিন্ন মাহফিলে এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
উপরোক্ত কারামত সম্পর্কে আমেরিকা প্রবাসী জনাব মাওলানা শরীফ উদ্দিন লিখেছেন, এ ঘটনাটি ঘটে ২০০১ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে। ঐ সময় আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছিলো।
নিউজার্সীর প্যাটারসন শহরের দু'বোন জুবেদা (১৬) ও সাজেদা (১৪) এবং তাদের খালাত বোন রাহেলাকে (১২) তাদের মামা নিউইয়র্কের ফার রকওয়ে সমুদ্র সৈকতে বড়শী দিয়ে মাছ ধরতে নিয়ে যান। সেখানে আকস্মিকভাবে পানিতে ডুবে তিন বোনই মৃত্যুবরণ করে। ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রাহেলার লাশ কোস্ট গার্ডরা উদ্ধার করতে সমর্থ হয়।
কিন্তু ডুবুরী ও উদ্ধারকারী দল ৫/৬ দিন পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টার পরও জুবেদা ও সাজেদার কোনো সন্ধান লাভ করতে পারেনি। এই সময়ে খবর আসে যে ছাহেব কিবলাহ ও বিশকুটি ছাহেব লন্ডনে অবস্থান করছেন। ওই মেয়েদের ছোট চাচা টেলিফোনে ছাহেবদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপ করেন। ছাহেবগণ মেয়েদের পিতাকে সবর করতে উপদেশ দেন।
কিন্তু মেয়েদের ছোট চাচা এক ঘণ্টার ভেতর লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে লন্ডনের পথে রওয়ানা হন। ইতোমধ্যে তাদের সেখানকার এক আত্মীয় ছাহেবগণের নিকট গিয়ে কোনো কিছু দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন বিশকুটি ছাহেব ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-কে অনুরোধ করলে তিনি একখানা ভাজ করা তাবিষ তার হাতে দিয়ে বলেন যে ওই তাবিযখানা বিসমিল্লাহ বলে যেন ঘটনার স্থানে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
মেয়েদের ছোট চাচা হিথ্রো বিমান বন্দরে গিয়ে তাবিযখানা গ্রহণ করে ফিরতি ফ্লাইটে কেনেডি এয়ারপোর্টে পৌঁছেন এরপর ছাহেব কিবলার নির্দেশ মতো যথাস্থানে গিয়ে তা পানিতে ভাসিয়ে দেন। পরদিন দুপুরের দিকে ঘটনার স্থান থেকে ৫/৬ মাইল দূরে জুবেদার লাশ অক্ষত অবস্থায় ভেসে উঠে এবং এর পরদিন সাজেদার লাশ একই ভাবে অক্ষত অবস্থায় ভেসে উঠে। পানিতে ডুবে মরা এই তিনটি মেয়েকে প্যাটারসনের নিকটবর্তী টটোয়া শহরের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
দ্রষ্টব্য: মাওলানা শরীফ উদ্দীন লিখিত
'একজন ছাহিবে কারামত ওলী আল্লাহ' শীর্ষক প্রবন্ধ, যা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) স্মারকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দু'আর বদৌলতে দৃষ্টিশক্তি লাভ: ১৪১২ হিজরী সনে হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলীর হস্তলিখিত 'কাসীদাতুন নু'মান'-এর একটি নুসখা প্রকাশিত হয়েছিল।
এতে তিনি 'পূর্বাভাষ' শিরোনামীয় ভূমিকায় আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর বাচনিক শুনে বর্ণনা করেন, প্রায় ৫০ বছর পূর্বে সিলেটের জকিগঞ্জ থানার বিলবাড়ি নিবাসী হেকিম মাওলানা আব্দুস সুবহান চৌধুরী ছাহেব দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তিনি ফুলতলী ছাহেবকে নিজ বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে যান এবং বলেন, "আমার ইরাদা হজ্জ ও যিয়ারত করার।
আপনি দু'আ করুন যেন আল্লাহ তা'আলা আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন।” ফুলতলী ছাহেব বিনয় সহকারে বললেন, "এত বড় দু'আর জন্য আল্লাহর কোনো মকবুল বান্দাহকে তলব করা উচিত ছিল।" তখন হেকিম ছাহেব বলেন, "আপনার দু'আ নেয়ার জন্য আমাকে ইশারা করা হয়েছে।” ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ হেকিম ছাহেবের কথায় অভিভূত হয়ে দু'আ করলেন।
হেকিম ছাহেব তাঁকে একখানা মুতারজাম (অনুবাদ) 'কাসীদাতুন নু'মান' দান করলেন। আলহামদুলিল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাচ্চা আশিক হেকিম ছাহেব পবিত্র হেজায ভূমিতে পদার্পণ করলে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। তিনি নয়ন ভরে মক্কা মুকাররামা, মদীনা মুনাওয়ারা ও অন্যান্য স্থান অবলোকন করেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের সময় চট্টগ্রাম অথবা সিলেট পৌঁছলে তিনি আবার অন্ধ হয়ে যান।
সূত্র: আল্লামা ইমাদ উদ্দীন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলীর
হস্তলিখিত 'কাসীদাতুন নু'মান'-এর পূর্বাভাষ
ইন্তেকালঃ ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রিয় রাহবার, আমাদের পীর ও মুর্শিদ আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ছাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী (র) ইন্তেকাল করেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক বালাই হাওরে প্রিয় মুর্শিদের জানাজার নামাজ অনুষ্টিত হয়। উক্ত জানাজার নামাজে ইমামতি করেন হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী (বড় ছাহেব ক্বিবলাহ ফুলতলী)।
তথ্যসূত্র: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী রচিত, হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব ক্বিবলাহ (রহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী নামক বই থেকে নেওয়া।
%20%E0%A6%8F%E0%A6%B0%20%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%80.jpg)
0 Comments