আযানের শব্দসমূহ, আযানের জবাব, আযানের মুনাজাত, ইকামাত

আযানের বিবরণ, আযানের পদ্ধতি ও সূত্রপাত, আযান দেয়ার তরীকা, আযানের জবাব, আযানের শব্দসমূহ, আযান উচ্চারণ, ফজরের আজান বাংলা উচ্চারণ, আযান দেওয়ার নিয়ম, Āyānēra śabdasamūha, আজান বাংলা লিরিক্স, আজান আরবি উচ্চারণ, আযান ও ইকামত বাংলা উচ্চারণ, আযানের বাংলা শব্দসমূহ, আযান লিরিক্স আরবি, আযানের জবাব, আযানের শব্দ সমূহ,

আযানের শব্দসমূহ, আযানের জবাব, আযানের মুনাজাত, ইকামাত

আযানের বিবরণ:
নামাযের সময় হলে একজন লোক ইসলামী শরী'য়তের বিধিসম্মত কতিপয় শব্দাবলি ব্যবহার করে উচ্চৈঃস্বরে নামাযীদেরকে নামায এবং জামা'আতে আসার জন্য যে আহ্বান করে থাকেন, ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় তাকে আযান বলে। আর যিনি আযান দেন তাঁকে মুয়াযযিন বলে। নামাযের জামা'আতের জন্য আযান দেয়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

আযানের পদ্ধতি ও সূত্রপাত

ইসলামের প্রথম পর্যায়ে নামাযের জামা'আতের জন্য আযান দেয়ার প্রচলন ছিল না। পরবর্তীতে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মসজিদে নববী স্থাপিত হল। মুসলমানগণকে নামাযের জামা'আতে উপস্থিত হবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হওয়ায় নবী কারীম (সাঃ) একদিন স্বীয় সাহাবাগণকে নিয়ে একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করলেন। 

পরামর্শ সভায় সাহাবা (রাঃ) গণ নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে কেউ বললেন, নামাযের সময় হলে ঘণ্টা বাজান হউক। কেউ প্রস্তাব দিলেন, আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হউক, কেউ প্রস্তাব করলেন, শিঙ্গা বাজান হউক। এভাবে অনেক সাহাবী অনেক প্রস্তাব পেশ করলেন, কিন্তু মহানবী (সাঃ)-এর এসব প্রস্তাবসমূহের একটিও পছন্দ হল না। 

হযরত ওমর (রাঃ) ঐ পরামর্শ সভাতে উপস্থিত ছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) উঠে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আমার একটি প্রস্তাব হল, নামাযের সময় হলে একজন লোক উঁচু জায়গায় উঠে আল্লাহ এবং রাসূলে কারীম (সাঃ)-এর নামে লোকদেরকে আহ্বান করবে।

হযরত ওমর (রাঃ)-এর প্রস্তাব শোনার পর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আমি স্বপ্নযোগে এসব শব্দাবলি কাউকে উচ্চারণ করতে শুনেছি। হযরত ওমর (রাঃ) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী (রাঃ)-এর প্রস্তাবসমূহ উপস্থিত সকল সাহাবাগণ (রাঃ) এবং রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সমর্থনে গৃহীত হল।

মুহূর্তের মধ্যেই হযরত জিব্রাইল (আঃ) মহান আল্লাহর পক্ষ হতে রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে আযানের শব্দসমূহ এবং আযান দেয়ার নিয়ম-কানুনসমূহ শিক্ষা দিয়ে গেলেন।

এরপর রাসূলে আকরাম (সাঃ) উপস্থিত সাহাবাগণ (রাঃ) এবং এ ওহীর সমন্বয়ে এর সমর্থন করলেন। এরপর রাসূলে কারীম (সাঃ) হযরত বেলাল (রাঃ)-কে ডেকে পাঠিয়ে আযানের শব্দসমূহ এবং নিয়ম-কানুনসমূহ শিখিয়ে দিলেন।

এরপর নামাযের সময় হলে হযরত বেলাল (রাঃ) সকল সাহাবা (রাঃ) গণকে জামা'আতে এসে নামায আদায়ের জন্য উল্লিখিত নিয়মে আযান দিলেন এবং এর ফলে সকল সাহাবা (রাঃ) গণ জামা'আতে এসে নামায পড়ার সুযোগ পেলেন।

আর এভাবেই পরবর্তী যুগে নামাযের জন্য আযানের প্রচলন শুরু হয় এবং কিয়ামতের আগ পর্যন্ত যতদিন নামাযী থাকবে ততদিনই এ নিয়ম চলতে থাকবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে আযানের সঠিক মর্ম বুঝে তার মর্যাদা রক্ষা করার তৌফিক দান করুন।

আযান দেয়ার তরীকা

আযান দেয়ার সুন্নত তরীকা হল, নামাযের সময় হলে অযু-গোসল সেরে পাক-পবিত্র হয়ে মুয়াযযিন সাহেব মসজিদের মিনারা কিংবা কোন উঁচু জায়গায় কিবলামুখী দাঁড়িয়ে দু'হাতের শাহাদাত অঙ্গুলি কানের ছিদ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে খুব উচ্চৈঃস্বরে এবং সুমিষ্ট কণ্ঠে আযানের শব্দসমূহ ধারাবাহিকভাবে উচ্চারণ করবে।

প্রকাশ থাকে যে, যদি কোন মসজিদে মাইকের ব্যবস্থা থাকে তবে মাইকের হর্নসমূহ মসজিদের ছাদের উপরে দিয়ে মসজিদের ভেতর থেকেও আযান দেয়া যাবে।

এরূপ ব্যবস্থা থাকলে মিনারা কিংবা উঁচু স্থানে গিয়ে উঠে আযান দেয়ার প্রয়োজন নেই। আর যদি কোন মসজিদে মাইক কিংবা মিনারা ও উঁচু স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে মসজিদের বাইরে সমতল স্থানে অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থানে দাঁড়িয়েই আযান দেয়া যাবে।

আযানের শব্দসমূহ

উচ্চারণ ও অর্থসহ আযানের শব্দসমূহ নিম্নে লেখা হল। আযানদাতা এবং শ্রোতা সকলেরই এসব শব্দ ও অর্থের প্রতি খেয়াল রাখা এবং মনে মনে উচ্চারণ বা ধারণা করা প্রয়োজন। কারণ এতে আল্লাহর মহত্ব এবং বড়ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ঈমানী শক্তি দৃঢ় হয়ে থাকে।

اللهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ - اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ .

উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার (২ বার)।

অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।

أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ - أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (২ বার)।

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।

اشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ - أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

উচ্চারণ: আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (২ বার)।

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল।

حَيَّ عَلَى الصَّلوةِ - حَيَّ عَلَى الصَّلوة

উচ্চারণ: হাইয়্যা 'আলাছ ছালাহ, হাইয়্যা 'আলাছ ছালাহ।

অর্থ: নামাযের দিকে আস, নামাযের দিকে আস।

حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ - حَى عَلَى الْفَلَاحِ

উচ্চারণঃ হাইয়্যা 'আলাল ফালাহ, হাইয়্যা 'আলাল ফালাহ।

অর্থ: কল্যাণের দিকে আস, কল্যাণের দিকে আস।

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার

অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।

إِلَ إِلَّا اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই।

প্রকাশ থাকে যে, বর্ণিত বাক্যসমূহ চার ওয়াক্ত নামাযে হুবহু বলবে। কিন্তু ফজরের নামাযের সময় হাইয়্যা'আলাল ফালাহ বলার পর ২ বার বলতে হবে-

الصَّلُوةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ - الصَّلُوةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ .

উচ্চারণ: আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাওম, আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাওম।

অথ: ঘুম হতে নামায উত্তম, ঘুম হতে নামায উত্তম।

আযানের জবাব

আযানের শব্দ, আজানের শব্দ, আযানের অর্থ সহ, আয়নার সামনে নামাজ পড়া যাবে কি, আযানের সময়, আযান দেয়ার নিয়ম, আযানের ধ্বনি, ayanera sabdasamuha, আযানের শব্দসমূহ, আযানের জবাব, আযানের মুনাজাত, ইকামাত

আযানের উত্তর

আযান দেয়া আরম্ভ হলে সকল প্রকার কাজ-কর্ম এবং বেচা-কেনা, গল্প-গুজব বন্ধ করে আযানের উত্তর দিবে। কারণ শ্রোতাদের (পুরুষ-মহিলা) সকলের উপর আযানের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

মুয়াযয্যিনের প্রতিটি বাক্য উচ্চারণ শেষ করলে শ্রোতারাও নীরবে ঐ সকল শব্দসমূহ বলবে এবং অর্থের দিকে খেয়াল রাখবে। মুয়াযযিন যখন বলবে

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ الله আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। তখন শ্রোতাগণ উত্তরে বলবে ETER IRR GAME) G) صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলবে حَيَّ عَلَى الصَّلْرَةِ )হাইয়্যা 'আলাচ্ছালাহ) এবং حَيَّ عَلَى الْفَلاح)হাইয়্যা 'আলাল ফালাহ) তখন শ্রোতাগণ বলবে لأَحَوْلَ وَلَا قُوَّةَ الا بالله হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ্)। ফজরের আযানের সময় মুয়াযযিন যখন বলবে الصَّلُوةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ )আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান্নাওম) তখন শ্রোতাগণ বলবে
صَدَّقْتَ وَبَارَكْتَ )ছাদ্দাক্বতা ওয়া বারাকতা)।

আযানের মুনাজাত

اللهم رب هذه الدعوه التامه والصلاه القائمه ات محمد الوسيله والفضيله والدرجه الرفيعه وبعثه مقاما محمودنا الذي وعدته انك لا تخلف الميعاد

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ্ দা'ওয়াতিত্ তাম্মাতি ওয়াহ্ ছালাতিল ক্কায়িমাতি আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াছীলাতা ওয়াল ফাদ্বীলাতা ওয়াদ্ দারাজাতার্ রাফী 'আতা ওয়াব'আছহু মাক্বামাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া'আতাহু ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী'আদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহ্বান এবং এ নামাযের তুমিই প্রভু! হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে দান কর সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান ও সুমহান মর্যাদা এবং বেহেস্তের শ্রেষ্ঠতম প্রশংসিত স্থানে তাঁকে অধিষ্ঠিত কর, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ। নিশ্চয়ই তুমি অঙ্গীকার ভঙ্গ কর না।

ইকামাত

ফরয নামাযের জামা'আত আরম্ভ করার আগে মুয়াযযিন মুসল্লীদেরকে জামা'আতের উদ্দেশ্যে দাঁড়ানোর জন্য যে সকল শব্দাবলি উচ্চারণের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন, ইসলামী শরী'য়তের পরিভাষায় তাকে ইকামাত বলে।

প্রকাশ থাকে যে, ইকামাতের জন্যও আযানের শব্দসমূহ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, শুধুমাত্র "হাইয়্যা'আলাল ফালাহ" বলার পর দু'বার করে বলতে হবে قَدْقَامَةِ الصَّلُوةُ )ক্বাক্বামাতিচ্ছালাহ) অর্থাৎ-নিশ্চয়ই নামায আরম্ভ হয়ে গেল।

Post a Comment

0 Comments