মাওনা-কালিয়াকৈর সড়ক: দিনে দুর্ঘটনা, রাতে ডাকাত আতঙ্ক
দিনে সড়ক দুর্ঘটনা, রাতে ডাকাত আতঙ্ক
৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে রয়েছে ২০টি ভয়ঙ্কর বাঁক, দুর্ঘটনায় গত ৭ মাসে ১০ জনের প্রাণহানি।
গাজীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কটির দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। স্বল্প দৈর্ঘ্যের এ সড়ক জেলার শ্রীপুরের শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত মাওনা চৌরাস্তা এবং কালিয়াকৈরে যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শাল-গজারি বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়কটি যানজটমুক্ত হওয়ায় অনেকে এ সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। কালিয়াকৈর বা মাওনা থেকে স্বল্প সময়ে আসা-যাওয়া করা যায় এজন্য অনেক যাত্রী চলাচলের জন্য যানজটমুক্ত এ সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উপভোগ করার জন্য অনেক পর্যটকও এ সড়ক ব্যবহার করে থাকেন।
সম্প্রতি দিনে সড়ক দুর্ঘটনা এবং রাতে ডাকাতির ঘটনায় সড়কটি হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। ফাঁদ পেতে রাখে ডাকাতদল। সড়কের সেতু ও কালভার্টে রশি বেঁধে এবং স্থানে স্থানে শাল বন থেকে গজারি গাছ কেটে সড়কে ফেলে তৈরি করা হয় ফাঁদ। সেই ফাঁদে আটকা পড়ে যানবাহন। এরপর ডাকাতদল সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।
মাওনা-কালিয়াকৈর সড়ক নিরাপদ রাখতে কাজে আসছে না পুলিশের নানাবিধ পদক্ষেপ। নিরাপত্তা টহল বাড়িয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা, ছিনতাই ও ডাকাতি। দিনের যাত্রাও নিরাপদ নেই। বাড়তি ফোর্স নিয়ে সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করছেন তারা। গভীর রাতে চলছে টহল। এত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, টহল আর তদারকির মধ্যেও সড়কে দুর্ঘটনা, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না।
চলন্ত যানবাহন থামিয়ে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো যেন এখন সৌভাগ্য। বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় চালক ও তাদের সহকারীরা জড়িত থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন যাত্রী ও স্থানীয়রা। Mauna-Kaliakair road: Accidents during the day, robbers at night, road accidents during the day.
মাওনা-কালিয়াকৈর সড়ক: দিনে দুর্ঘটনা, রাতে ডাকাত আতঙ্ক
রাত বাড়লেই সড়কে বাড়ে ছিনতাই ও ডাকাত আতঙ্ক। প্রায়ই রাতে সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন কৌশলে যাত্রীবাহী সিএনজি, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার থামিয়ে অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে লুটে নিচ্ছে নগদ অর্থ ও মূল্যবান মালামাল।
সড়কে চলাচলকারী চালক, যাত্রী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাতে ডাকাত আতঙ্ক এবং দিনে দুর্ঘটনার ভয় মাথায় নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। সন্ধ্যার পর থেকেই সড়কে গাছ ফেলে যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার থামিয়ে হানা দিচ্ছে ডাকাতরা।
সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডাকাত দলের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় জড়িত। কেউ পোশাক কারখানায় খণ্ডকালীন কাজ করে। আবার কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসা করে বা অটোরিকশা চালায়। তারাই রাতের বেলা হয়ে ওঠে ভয়ংকর।
মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে পিকআপ রেখে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি। ৩০ জুলাই দিবাগত রাত ১টায় শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ওই সড়কে এ ঘটনা ঘটে। ওই সড়কের হাসিখালি ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে রাত ১০টার পর প্রায়ই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে জানান স্থানীয়রা।
ডাকাত দল গাজীপুর জেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শরীফুল ইসলাম সরকারের (৪০) গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। ডাকাতরা হামলা করে তার গাড়িচালক মইনুলকে (৩১) কুপিয়ে আহত করে এবং তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। এ ঘটনায় পরদিন সকালে শরীফুল ইসলাম শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত বছরের ৩ মার্চ মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে রাত ২টার দিকে সিংগারদিঘি গ্রামের হাসিখালি ব্রিজ এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দলের সদস্যরা টহলরত পুলিশের ওপর হামলা করে।
ডাকাতদের দায়ের কোপে শ্রীপুর থানার পুলিশ কনস্টেবল রুহুল আমিন (২৫) ও সেলিম (৩৫) আহত এবং পুলিশের ধাওয়ায় দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় চলন্ত ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ডাকাত সদস্য রুবেল মিয়া (২৭) আহত হয়। রুবেল শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। সে আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।
একই বছরের ১২ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসিখালী ব্রিজ এলাকায় গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন ব্যবসায়ীর টাকাপয়সা লুট করে নেয় ডাকাতরা। ওই বছরের ৪ আগস্ট বদনীভাঙ্গা মোড়ে গাছ ফেলে ডাকাতি হয়। একই বছরের ১৮ নভেম্বর একযোগে সড়কের তিনটি পয়েন্টে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
বিপজ্জনক বাঁকে ঘটছে দুর্ঘটনা
চলতি বছরের ৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই সড়কের হাশিখালি সেতুর পশ্চিম পাশে সড়কে গজারি গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘বিগত দুই-এক বছরে ঘটে যাওয়াসহ সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ডাকাতির ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে ওইসব স্থানে পুলিশ টহল জোরদার এবং সড়কের কয়েকটি স্থানে স্থায়ী টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বলেন, ‘মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে পুলিশের টহল অব্যাহত আছে। ডাকাতি রোধে পুলিশকে এখন থেকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
রাতে ডাকাতি দিনে ছিনতাই ঢাকায় আতঙ্ক
৩২ কিলোমিটারে ২০ ভয়ংকর বাঁক, সাত মাসে ১০ জনের প্রাণহানি
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং মাওনা চৌরাস্তার প্রাইভেট হাসাপাতালের জরুরি বিভাগের ভর্তি ও মৃত্যু বিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে সড়কটির ২০ জায়গায় বিপজ্জনক বাঁকে অর্ধ শতাধিক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। আহতদের মধ্যে অনেকে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
চলতি বছরের ১৪ জুন বদনীভাঙ্গা (মনসুরাবাদ) এলাকায় চলন্ত গাড়ির ধাক্কায় সড়কে ছিটকে পড়ে শিমলাপাড়া গ্রামের আহাম্মদ আলীর ছেলে মুরগি ব্যবসায়ী মোটরসাইকেল চালক হারুনুর রশিদ (৩৫) এবং আরোহী জাকির হোসেন (৩৮) নিহত হন।
১৮ জুলাই দুপুরে বড়চালা এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের তিন জনসহ পাঁচ জন নিহত হন।
১৯ জুলাই ওই সড়কের চাপার সেতুর দক্ষিণ পাশে সড়ক পার হওয়ার সময় সিমেন্ট মিক্সার গাড়ির চাপায় উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের রাদের ছেলে ওষুধ ব্যবসায়ী রৌদ্র পাল (২৫) নিহত হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি সড়কের কাওরান বাজার এলাকায় রাশেদ ও আবু বক্কর ছিদ্দিক নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন।
চালক যাত্রী ও এলাকাবাসী বলছেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও বাঁকে দুর্ঘটনা ঘটছে। ৩৭ কিলোমিটার সড়কে ১৭টি ভয়ংকর বাঁকে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত সাত মাসে দুর্ঘটনায় ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। তবু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, এ এলাকায় অন্তত ১৭টি ভয়ংকর বাঁক আছে। এসব বাঁকে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ বাঁকে কোনও কার্যকর সংকেতচিহ্ন নেই। যেটুকু সাংকেতিক চিহ্ন রয়েছে, তাও অস্পষ্ট এবং দূর থেকে দেখা যায় না।
সিএনজি চালক জব্বার মিয়া বলেন, ‘সড়কে গাড়ি ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলে। ইচ্ছা করলেই গাড়ি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাঁকগুলো এত ভয়ঙ্কর যে এক পাশ থেকে অন্য পাশ দেখা যায় না। বাঁকগুলোতে যে নির্দেশক দেওয়া আছে, তা অস্পষ্ট এবং দূর থেকে দেখা যায় না। বিশেষ করে রাতের বেলা সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’
আরেক চালক কবির হোসেন বলেন, ‘মূলত এ ধরনের বড় বাঁকে কনভেক্স মিরর স্থাপন করা উচিত, যাতে চালকরা দূর থেকে আসন্ন বাঁকের বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন দেখতে পারেন এবং দুর্ঘটনা এড়াতে পারেন। সংকেত বাতি স্থাপন করা হলে সমস্যা থাকবে না।’
দিনে সড়ক দুর্ঘটনা, রাতে ডাকাতের ভয়, সড়কের দুই পাশে বিস্তৃত ঘন শালবন, রয়েছে অসংখ্য বাঁক
যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় সময়েই ঘটছে প্রাণহানি, রাতে গাছ ফেলে ডাকাতি শেষে বনে লুকিয়ে পড়ছে ডাকাত দল।
(শ্রীপুর) গাজীপুর
মাওনা-কালিয়াকৈর সড়ক: দিনে দুর্ঘটনা, রাতে ডাকাত আতঙ্ক
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলায় বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের হাজারো কর্মকর্তা, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। যানবাহনে করে পণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহের জন্যও সড়কটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া দুই উপজেলার মানুষেরও যাতায়াতের পথ এটি।
সড়কটির মাওনা থেকে ফুলবাড়ীয়া পর্যন্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে সওজের গাজীপুর কার্যালয়। কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল মিয়া বলেন, ‘সড়কের উভয় পাশে ১০০ মিটারের মধ্যে সংকেত বাতি স্থাপন করতে না পারলেও “ডানে মোড়,” “বামে মোড়” লিখে সিগন্যাল দেওয়ার দ্রুত ব্যবস্থা করবো আমরা।
সড়কে স্পিড ব্রেকার (গতি রোধক) দেওয়ার নিয়ম নেই আমাদের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সড়কটির ১৩ কিলোমিটারের ওই অংশের বাঁকগুলোর ঝুঁকি বিবেচনায় দুর্ঘটনা রোধে র্যাম্বেল স্ট্রিপ (ঘন ছোট গতিরোধক) দিয়ে দেবো যাতে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।’ এ ছাড়া যেসব এলাকার সড়ক নির্দেশক মুছে গেছে, সেগুলো দ্রুতই ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।
দিনে সড়ক দুর্ঘটনা, রাতে ডাকাতের ভয়
সড়কের দুই পাশে বিস্তৃত ঘন শালবন, রয়েছে অসংখ্য বাঁক
যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় সময়েই ঘটছে প্রাণহানি
রাতে গাছ ফেলে ডাকাতি শেষে বনে লুকিয়ে পড়ছে ডাকাত দল
রাতুল মণ্ডল, (শ্রীপুর) গাজীপুর
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশে বিস্তৃত ঘন শালবন। সড়কটিতে রয়েছে অসংখ্য বাঁক। এসব বাঁক অতিক্রম করতে গিয়ে প্রায় দিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। দিনের বেলায় যানবাহন চলাচল বেশি থাকায় এ সময় দুর্ঘটনাও বেশি ঘটছে। আর রাত নামলে শালবনবেষ্টিত সড়কটিতে ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে কাওরান বাজার থেকে হাসিখালী ব্রিজ পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার অংশ। যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা বলছেন, সড়কটিতে দিনে দুর্ঘটনার ভয়, আর রাত হলেই ডাকাতের আতঙ্ক। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও ডাকাত-আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হয় এই সড়কের যাত্রী ও চালকদের।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলায় বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের হাজারো কর্মকর্তা, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এ পথ দিয়ে যাতায়াত করেন। যানবাহনে করে পণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহের জন্যও সড়কটি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া দুই উপজেলার মানুষেরও যাতায়াতের পথ এটি।
স্থানীয় বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়া-মাওনা আঞ্চলিক সড়কের বড়চালা এলাকায় কাভার্ড ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অটোরিকশার চালক ও একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচজন নিহত হন।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি কাওরান বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মো. রাশেদ ও আবু বক্কর ছিদ্দিক নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন। গত ১৪ জুন বাদনীভাঙ্গা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় হারুন অর রশিদ ও জাকির হোসেন নামের আরও দুই ব্যবসায়ী প্রাণ হারান। এ ছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেশ কয়েকজন আরোহী নিহত ও আহত হয়েছেন।
এদিকে মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে রাত নামলেই ডাকাত-আতঙ্ক দেখা দেয়। সর্বশেষ ৯ জুলাই রাত ১০টার দিকে হাসিখালী ব্রিজের কাছে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির চেষ্টা করা হয়। এ সময় অটোরিকশার যাত্রী এক ব্যবসায়ী ব্রিজের কাছে পৌঁছালে জঙ্গল থেকে ১০ থেকে ১২ জন হাতে রামদা নিয়ে সড়কে আসে। হামলার আশঙ্কা দেখে দ্রুত অটোরিকশাটি ঘুরিয়ে রক্ষা পান ওই ব্যবসায়ী অটোরিকশার চালক।
গত বছরের ৪ এপ্রিল সড়কে হাসিখালী ব্রিজ এলাকায় গাছ ফেলে ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে ডাকাত দল পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। একই বছরের ১২ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসিখালী ব্রিজ এলাকায় গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এ সময় কয়েকজন ব্যবসায়ীর টাকাপয়সা লুটপাট করে নেয় ডাকাতেরা। ওই বছরের ৪ আগস্ট বদনীভাঙ্গা মোড়ে গাছ ফেলে ডাকাতি হয়। একই বছরের ১৮ নভেম্বর একযোগে সড়কের তিনটি পয়েন্টে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত ৯ জুন রাত ১০টার দিকে উপজেলার হাসিখালী ব্রিজে গাছ ফেলে ডাকাতি করে ১০ থেকে ১৫ জন ডাকাত। তাদের হাতে ছিল ধারালো রামদা।
সড়কটিতে নিয়মিত গাড়ি চালান মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমি এবং বেশ কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ডাকাতদের কবলে পড়ি।’
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘গত দুই বছরে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ডাকাতির ঘটনাস্থল চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি এই সড়কের কয়েকটি স্থানে স্থায়ী টহলের ব্যবস্থা করা হয়। সব ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টা মামলা আমলে নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে ছক তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পুলিশ ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। আশা করছি, সড়কটি দ্রুত সময়ের মধ্যে চলাচলের জন্য নিরাপদ হবে।’
শ্রীপুরের ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, ‘এই সড়কের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
0 Comments